৩৯ দিনে ধান চাষের পদ্ধতি ও কোন মাটিতে এই ধান উৎপাদন হয়

আপনারা হয়তো ধান চাষের উপযুক্ত মাটি কোনটি এবং ধান চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। আজকে আমরা ধান চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি এবং ধান চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সম্পূর্ণ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।




ধান চাষের উপযুক্ত মাটি এবং পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে নিচে সুস্পষ্ট আলোচনা করা হলো। সেগুলো মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ভূমিকা

আমাদের দেশের শতকরা ৯০% মানুষই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত।ধান চাষের পদ্ধতি ও কোন মাটিতে এই  ধান  উৎপাদন হয়, ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। তাই কিভাবে ধান চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যাবে? ধান চাষের পদ্ধতি? ধান চাষের উপযোগী মাটির নাম? ধানের জাতের নাম? ধান গাছের পরিচর্যা?

ধান গাছকে কিভাবে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করা যাবে? ধান গাছে কখন সেচ ও সারপ্রদান করতে হবে? পাশাপাশি ধানের ফলন কয়েকগুণ কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় ইত্যাদি সম্পর্কে নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আকারে আলোচনা করব।

  • ধান গাছ কে কিভাবে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করা যায় ?
  • ধানের ফলন কিভাবে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা যায় ?
  • ধান গাছে কখন সেচ ও সার দিতে হয় ?
  • ধান চাষের উপযোগী মাটি ?
  • ধানের জাতের নাম ?
  • ধান চাষের পদ্ধতি ?
  • ধান গাছের পরিচর্যা ?

ধান চাষের উপযোগী মাটিঃ

মাটিতে এই  ধান  উৎপাদন হয় ফসল উৎপাদনের অন্যতম মাধ্যম হলো মাটি। মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর ফসল উৎপাদন পুরোপুরি নির্ভরশীল। পানি ও পুষ্টির একমাত্র প্রাকৃতিক উৎস হলো মাটি। সব ধরনের মাটিতেই ধান উৎপাদন করা সম্ভব নয়। এর জন্য ধান চাষ উপযোগী মাটি হলো পলিমাটি, পলি দোআঁশ মাটি এবং কাদামাটি। এই মাটিগুলোতে ধান গাছ ভালো হয়

এবং ধানের ফলন অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। পলিমাটি, পলি দোআঁশ মাটি এবং কাদা মাটিতে ধান চাষ করা যায়। এই মাটিগুলো অত্যন্ত প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। যার কারণে ধান গাছ খুব সহজেই বেড়ে উঠতে পারে। ধান গাছের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সকল পুষ্টি উপাদান এই মাটিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।

তাই এই মাটিগুলোর মধ্যে ধানের চারা রোপন করলে ধান গাছ অনেক ভালো জন্মাবে এবং ফলন কয়েক গুণে বৃদ্ধি পাবে। যে কারণে ধান চাষ করার পূর্বে আমাদের এই মাটিগুলো নির্বাচন করা উচিত।

ধানের জাতের নামঃ

ধান চাষের পূর্বে আমাদের জানা উচিত ধানের জাত সম্পর্কে। ভালো জাত নির্বাচন করতে পারলেই অল্প সময়ে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে অনেক ধরনের ধানের জাত রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত হলো ব্রি ধান ৮২, ব্রি ধান ৮৩, ব্রি ধান ৮৪, ব্রি ধান ৮৫, ব্রি ধান ৮৬, এই পাঁচটি ধানের জাত বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো এবং উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত।

এছাড়াও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত বেশ কিছু ভালো ধানের জাত রয়েছে। যেমন বিআর-১ চান্দিনা, বিআর-২ মালা, বিআর-৩ বিপ্লব, বিআর-৪ ব্রিশাইল, বিআর-৬ বোরো, বিআর-৮ আশা, বিআর-৯ সুফলা, বিআর-১০ প্রগতি,ব্রি

হাইব্রিড ধান-১, ব্রি হাইব্রিড ধান-২ ,ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ , ইরাটম-২৪, ইরাটম-৩৮, বিনাধান-৪, বিনাধান-৫, বিনাধান-৬, কটকতারা, তিলক কাচারী, পানবিড়া, পাটনাই-২৩, লাটিশাইল, দোলার, টোপা বোরো , নাইজারশাইল, লালআমন ইত্যাদি।

ধান চাষের পদ্ধতিঃ

আমাদের দেশে দুই ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে ধান চাষ করা হয় । একটি হলো সরাসরি জমিতে বীজ রোপন পদ্ধতি। আরেকটি হলো চারা রোপন পদ্ধতি। চারা রোপন পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রথমেই ধানের চারা তৈরি করার জন্য অল্প কিছু জমিকে ভালোভাবে চাষ দিয়ে নিতে হবে।চাষ দেয়ার পরে জমি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে ।

তারপর জমিতে সেচ দিয়ে জমি নরম করে নিতে হবে।নরম করে নেবার পরে মাটির উপরে ধানের বীজ এবং সার সুন্দরভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে ।এভাবে কয়েকদিন রাখলেই চারা বের হওয়া শুরু করবে। তারপর ধানের চারা যে জমিতে রোপন করব সেই জমি রোপনের উপযোগী করে প্রস্তুত করে নিতে হবে। প্রস্তুত করার জন্য জমি ভালোভাবে তিন থেকে চারবার চাষ দিয়ে নিতে হবে।

চাষ দেবার পরে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ দিতে হবে। যাতে করে জমির মাটি পুরোপুরি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এখন ধান গাছের চারার বয়স 20 থেকে 22 দিন হলেই সেগুলো তুলে প্রস্তুতকৃত জমিতে সারিবদ্ধ লাইন করে রোপন করে দিতে হবে।চারা রোপন করে দেবার পরে জমিতে প্রয়োজনমতো সব ধরনের সার প্রয়োগ করতে হবে।

এখন জানব বীজ রোপণ পদ্ধতি সম্পর্কে। জমিতে সরাসরি বীজ রোপন করার জন্য প্রথমে আমাদেরকে জমি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে। চাষ করার পরে আবর্জনা ও আগাছা বেছে জমি পরিষ্কার করতে হবে। 

তারপর চাষকৃত জমিতে প্রয়োজনমতো সব ধরনের সার ছিটিয়ে দিতে হবে। সার দেবার পরে পুরো জমিতে ধানের বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে। এভাবেই বীজ রোপন পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হয়ে থাকে ।

ধান গাছে কখন সেচ ও সার দিতে হয়ঃ

ধানের চারা গাছের জন্য সার ও সেচ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সঠিক সময়ে সার ও সেচ না দিলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। ধানের চারা রোপনের ৮ থেকে ১২ দিনের মধ্যে সার প্রয়োগ করতে হয় এবং সার প্রয়োগের সাথে সাথে জমিতে সেচ দিতে হবে।

এছাড়াও পর্যায়ক্রমে ২৫ থেকে ৩০ দিন এবং ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর আরো দুইবার জমিতে সার ও সেচ দিতে হবে।সার ও সেচ না দিলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব নয়।ধানের চারা রোপনের ৮ থেকে ১২ দিনের মধ্যে সার প্রয়োগ করতে হয় এবং সার প্রয়োগের সাথে সাথে জমিতে সেচ দিতে হবে।এছাড়াও পর্যায়ক্রমে ২৫ থেকে ৩০ দিন এবং ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর আরো দুইবার জমিতে সার ও সেচ দিতে হবে।

ধান গাছের পরিচর্যাঃ

ধান গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করা অত্যন্ত জরুরী। নিয়মিত পরিচর্যা করলে ধান গাছ অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।গাছ রোগ মুক্ত রাখতে চাইলে নিয়মিত ধানের জমির অবাঞ্চিত আগাছা কেটে পরিষ্কার করতে হবে।
 
আগাছা পরিষ্কার থাকলে ধান গাছ সুস্থ ও সবলভাবে বেড়ে উঠতে পারে।ধানের ফলন অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের নিয়মিত ধানের জমির পরিচর্যা করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ

ধান অধিক পাকা অবস্থায় ফসল কাটলে অনেক ধান ঝরে পড়ে। শিষ পড়ে য়ায়,শিষকাটা পোকা বা অন্যন্যা পাখির উপদ্রব হতে পারে।শিষে যখন হলদু বর্ণ আসে তখন বুঝতে হবে ধান পাকতে শুরু করছে।পনেরো দিনের মধ্যে পেকে যাবে। তার পরে কেটে মারােই করে।বাজারজাত বা গুদামজাত করতে হবে।ও আর্দ্রাতা-রোধক করে সংরক্ষন করতে হবে।

 আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য এমন তথ্যমূলক পোস্ট পাওয়ার জন্য আমাকে ফলো করতে পারেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Asif
    Asif ২ আগস্ট, ২০২৪ এ ১১:৫১ AM

    আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু শিখলাম।ধন্যবাদ আপনাকে এত তথ্য বহুল আর্টিকেল লেখার জন্য।

  • Asif
    Asif ৪ আগস্ট, ২০২৪ এ ১০:০৫ AM

    আপনার আর্টিকেলটি পড়ে অনেক কিছু শিখলাম। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর পোস্ট লেখার জন্য।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url