স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার ২৫টি কৌশল জানুন ২০২৪
আধুনিক যুগে সবকিছুই পাল্টে গিয়েছে বাট দিন দিন মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে।
অনেকের আবার স্মৃতিশক্তি খুব কম। কোন কিছুর এখন বলবে একটু পরেই মনে রাখতে পারে
না। সব ভুলে যায়, বয়সের সাথে সাথে এ সমস্যাটা আরো বৃদ্ধি পায়। এবং অনেক মানুষ
রয়েছে যে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার কি কি কৌশল রয়েছে জানতে চায়, এবং কি ফল খেলে
শক্তি বৃদ্ধি পায়। আপনারাও যদি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে আজকের
পোস্টটি অবশ্যই আপনার জন্য প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব মনোযোগ সহকারে পড়ুন তাহলে
আপনি বুঝতে পারবেন কি করতে হবে।
আমরা যখন দেখি একটা মানুষ কিছুই মনে রাখতে পারছে না স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে।
অনেকে আবার বয়সের সাথে সাথেই বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে
ফেলেন। আপনারা যদি মস্তিষ্কের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে চান। তাহলে আমার কিছু গোপন
টিপস রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারবেন খুব সহজ ভাবে।
- ভূমিকা
আমরা হয়তো কম বেশি সবাই পড়াশোনা করছি বা করেছেন। কিন্তু এমনও হয়েছে যে কি পড়া
দিয়েছে মনে করতে পারছিনা অথবা পড়া মুখস্ত করে গিয়েছি বাট ক্লাসে গিয়ে যে
বিষয় আর বলতে পারছি না। ভুলে গিয়েছি, অনেকে আবার নিজের কাজের কথাও অনেক সময়
ভুলে যায়, বয়সের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক লোপ পায়। কিন্তু যদি অল্প বয়সে
এরকম সমস্যায় পড়েন। তাহলে এটি আপনার ভালো লক্ষণ নয়। আমরা যদি খুঁটিনাটি ও মনে
রাখতে না পারি তাহলে এটা আমাদের জন্য খুব মুশকিল হয়ে যাবে।
পোস্ট সূচীপত্র:-ভুলে যাওয়া হচ্ছে একটি মস্তিষ্কের মারাত্মক রোগ। আমরা স্মৃতিতে অনেক কিছু ধরে
রাখতে পারি, তাই স্মৃতিশক্তি ভালো করতে আমাদের জন্য বেশি জরুরী। এজন্য মস্তিষ্ক
ভালো রাখার জন্য আমাদের কিছু নিয়মিত খাবার খেতে হবে। তাছাড়া প্রতিদিন কিছু
নিয়ম মেনে ব্যায়াম করতে হবে, যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ভালো থাকবে। এবং স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি পাবে।
- ইসলামীক পদ্ধতিতে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার ১০টি উপায়
আমরা সবাই কমবেশি ইসলামকে মেনে চলার চেষ্টা করি।
এবং অনেকের ইচ্ছে থাকে নতুন নতুন দোয়া কুরআনের আয়াত ও সূরা মুখস্ত করি এবং আমল
করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করে থাকি। অনেকে আবার সেই সূরা গুলো মুখস্ত করতে
পেরেছে। আবার কেউ মুখস্ত করতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছে। মুখস্ত করতে ব্যর্থ
হওয়ার কারণ হলো সে কোন কিছু মনে রাখতে পারে না। দিন দিন আমাদের স্মৃতিশক্তি কমে
গিয়েছে। এইজন্য আমরা ইসলামী শরীয়ত মেনে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় ও
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির করার কৌশল সম্পর্কের নিচে জেনে নিন।
আরো পড়ুন :
শরীরে মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
স্মৃতিশক্তি বলতে বোঝায় পুরনো কিছু ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানীরা
স্মৃতিশক্তিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করেছে যেমন ১. স্বল্পস্থায়ী বা স্বল্প মেয়াদী
স্মৃতিশক্তি, ২. দীর্ঘস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিশক্তি, যেগুলো কথা অল্প
সময়ের জন্য আমাদের মস্তিষ্কের যেসব স্মৃতি থাকে সেগুলো হলো স্বল্পস্থায়ী
স্মৃতিশক্তি। আর কিছু কথা বা ইতিহাস যেগুলো আমাদের স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে সেগুলো
হল দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি। এইজন্য আমরা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার
জন্য কিছু কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা: আমরা সবাই জানি যে কোন কিছু মনে
রাখার জন্য যেকোনো কাজ বেশি বেশি করলে এটি আমাদের মস্তিষ্কে গেঁথে যায়। এইজন্য
আমরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে করতে পারি।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে হলে একই বিষয় বারবার বিভিন্ন উৎস থেকে পড়তে হবে। তাহলে
একই বিষয় বারবার চর্চা হলেই এতে করে ওই বিষয়টি আমাদের মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে
রয়ে যাবে চিরদিন।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়ত করা: অবশ্যই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়ত
করতে হবে । যেকোনো ধরনের কাজ করার আগে বা সফলতা অর্জনের আগে আমাদের অবশ্যই ভালো
নিয়ত করতে হবে। নিয়ত যদি সঠিক ও উত্তম কাজের জন্য হয় তাহলে সফলতা ইনশাল্লাহ
আসবে। ভালো কাজের জন্য অবশ্যই কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। এবং কোন কাজ
সফল হলে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে।
আমরা কোন কাজের শুরুতেই অথবা শেষে কোন কিছুই বলি না, এজন্য শয়তান আমাদের সবকিছু
ভুলিয়ে দেয়। মনে রাখতে বাধা দেয়। এজন্য আমরা নিয়মিত বিশুদ্ধ নিয়ত করে, কোন
কাজ শুরু করলে ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই। এবং আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি দ্বিগুণ
বৃদ্ধি করে দিবে।
দোয়া ও জিকির করা: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং আমাদের মস্তিষ্কের
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন নিয়মিত নামাজের পরে আগে দোয়া পড়া ও জিকির
করা উচিত এতে দিন দিন আমাদের মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে
আল্লাহতাআলা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন, এবং ভালো জ্ঞান দান করেন। নিয়মিত
জিকির করলে আল্লাহ স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন কোন কিছুই ভুলে গেলে আমাকে স্মরণ করো বেশি বেশি দোয়া ও জিকির
করো। এইজন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে দোয়া ও জিকির করতে পারি
প্রতিনিয়ত। তাহলে আল্লাহকে স্মরণ করা হলো, এবং আল্লাহ আমাদের কল্যাণকর কাজের
জন্য মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা দিন দিন আরো বাড়িয়ে দিবেন। স্মৃতিশক্তি দ্বিগুণ
বৃদ্ধি করে দিবে।
পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা: পাপ কাজ করলে মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা দিন দিন
কমে যায়। এতে স্মরণশক্তি দিন দিন লোভ পায়। পাপ কাজ করার ফলে অন্ধকারও জ্ঞানের
আলো কখনো একসাথে থাকতে পারে না। কারণ হলো পাপ কাজ করলে দিন দিন তার স্মৃতিশক্তি
দুর্বল হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন জ্ঞান হলো একটি আলো এই আলো পাপচারিকে দান
করি না। এইজন্য আমাদের উচিত পাপ কাছ থেকে নিজেকে বিরত রাখা, তাহলে আমাদের স্মরণ
শক্তি বৃদ্ধি পাবে। একমাত্র পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি
পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করা: স্বরণ শক্তি বৃদ্ধি করার কৌশল বিভিন্ন রকম
হয়ে থাকে, কারণ আমরা লক্ষ্য করলে দেখব যে আমাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে এককে জন্য
আর মুখস্ত করার পদ্ধতি একেক রকম হয়ে থাকে। কেউ বসে থেকে অনেক শব্দ করে এক লাইন
এক লাইন করে মুখস্ত করে। আবার কেউ শুয়ে থেকে তাড়াতাড়ি পড়ে মুখস্ত করে। কেউ
আবার নীরবে শব্দ ছাড়া পড়ে মুখস্ত করে। কারো আবার অভ্যাস রয়েছে হেঁটে হেঁটে
পড়লে নাকি তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়।
কেউ আবার রাত জেগে পড়লে তার পড়া নাকি ভালোভাবে মনে থাকে। কেউ আবার সকালে ভোরে
নামাজ পড়ে পড়লে তাড়াতাড়ি পড়া মুখস্ত হয়, এবং মনে থাকে। এই জন্য আমাদের
প্রত্যেকেরই উচিত নিজ নিজ উপযুক্ত সময়ে পরিবেশ মেন্টেন করে তার যথাযথ ব্যবহার
করা। কোরআন মুখস্ত করার যেমন কোন নির্দিষ্ট টাইম নেই, তেমনি বারবার কিছু নিয়ম
মেনে করলে তা মস্তিষ্কে ছাপ হিসাবে গেথে যায়।
আরো পড়ুন :
বাদাম খেলে কি কি উপকার হয়
পড়াশোনার ক্ষেত্রে বা অন্যান্য কোন কাজের ক্ষেত্রে এক জিনিস বারবার করলে তা
মস্তিষ্কের ভিতরে সেই বিষয় গভীরভাবে গেঁথে যায়। কিন্তু একটি বিষয় হলো যে ফজরের
নামাজ পড়ে কেউ কোন কিছু করলে বা মুখস্ত করতে চাইলে খুব তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়
এবং আল্লাহ তা'আলা তাঁর স্মৃতিশক্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে দেয়।
মুখস্তকৃত বিষয়ের ওপর আমল করা: আমরা সবাই জানি যে কোন কিছুই মুখস্ত করতে
অনেক সময় লাগে কিন্তু মুখস্ত করা বিষয় প্রত্যেকদিন একবার করে চর্চা করলে সে
বিষয়টি আমাদের মস্তিষ্কে ভালোভাবে গেঁথে যায়। আমাদের ব্যস্ত জীবনে কোন কিছুই
বারবার করার সময় হয়ে থাকে না এতে করে আপনার যেকোন কাজের মধ্যেও আপনি এই আমলগুলো
করতে পারেন। অনেকের বিভিন্ন ধরনের সূরা মুখস্ত রয়েছে কিন্তু প্রতিদিন পড়া সম্ভব
হয় না। এজন্য অনেকেই এগুলো দিনে দিনে ভুলে যায়।
তাদের জন্য এক ঢেলেই দুই পাখি মারার উপায় হলো, আপনি নামাজের মধ্যে এই সুরাগুলো
করে ডিভিশন দিতে পারেন। এতে আপনার সূরা গুলো আরো ভালোভাবে মুখস্ত হলো অন্যদিকে
আপনার আমল করা হলো, আপনারা যদি অন্য কোন বিষয়ে পড়া থাকে তাহলে কাজের মধ্যে এক
লাইন দুই লাইন করেই পড়ে পড়েও আপনারা ডিভিশন দিতে পারেন। এতে আপনার কাজ হলো এবং
পড়াও হলো এভাবেই নিয়মিত করতে পারলে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল ঠিক থাকবে এবং
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য হলো: আমাদের সুস্থ সবল থাকতে হলে সব সময়
পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য এটি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু
প্রয়োজনের অধিক খাবার গ্রহণ করলে ফলে আমাদের ঘুম বাড়িয়ে দেয়। এবং আমাদেরকে
অলস করে তোলে, এতে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। জ্ঞান
অর্জনের থেকে আমরা বিমুখী হয়ে পড়ি। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের
চেয়ে মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে যে সব খাদ্যে
অধিক পরিমাণ Omega-3 ফ্যাট রয়েছে।
সেসব খাদ্যে স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য ইসলামের নির্দিষ্ট কিছু খাবারের কথা বলা হয়েছে।
আবার অনেক বড় বড় ইমামরা বলেছে নিয়মিত মধু পান করা উচিত এটি পান করলে
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে খুব তাড়াতাড়ি। সকালে খালি পেটে কয়েকটি কিসমিস খেলে
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি ধরে রাখতে পারে।
প্রতিদিন তিন থেকে চারটি খেজুর খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে,
তেমনি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভালো রাখে, কারণ এই উপাদানগুলোতে রয়েছে মুক্ত চিনি
কোষ যা আমাদের মস্তিষ্ক গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া মধু
পান করার ফলে ৮ মিনিটের মধ্যে রক্ত মিশে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয় এগুলো খাবার
নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।
পরিমাপ মতো বিশ্রাম নেওয়া :আমরা যখন সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাই
তখনই মস্তিষ্কের কাজ শুরু হয়ে যায়, তা ব্যস্ত কোন অফিসের কাজের মতো। এটি তখন
আমরা সারাদিন কি কি কাজ করেছি সেই তথ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করে। তাছাড়া ঘুম
মস্তিষ্কের কোষ গুলো পূর্ণগঠন করে। এবং ক্লান্তি ভাব দূর করে ,টেনশন মুক্ত করে ।
এজন্য দুপুরে খাবার খাওয়ার পরে ক্লান্তি ভাব আসলে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া উচিত। এটা
আমাদের ইসলামে সুন্নাহ বলা হয়।
কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমানো যাবে না। কারণ অতিরিক্ত ঘুমালে মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে
যায়। আধুনিক যুগে আমরা একটু সময় পেলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সময় নষ্ট করি।
এর থেকে নিজেকে দূরে রেখে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া উচিত। এতে
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভালো থাকবে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবেন।
জীবনে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ত্যাগ করা : বর্তমান যুগে আমরা আমাদের
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার এবং জ্ঞান অর্জনের অনীহার একটি অন্যতম
কারণ হলো আমরা আমাদের জীবনে নিজেদেরকে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজের জড়িয়ে ফেলি।
ফলে আমাদের ভালো কোন কাজে গভীরভাবে মনোযোগ দিতে করতে পারিনা। যেকোনো কাজ করতে
গেলে একটা করতে চেয়ে অন্যটা করে ফেলি। আর সবচেয়ে কমন একটা বিষয় হলো যে আমরা
সালাত আদায় করতে গেলে কয়েক রাকাত সালাত আদায় করে,
পরে কয় রাকাত সালাত আদায় করেছি এটাই মনে রাখতে পারি না। এমনটা হওয়ার কারণ হলো
আমরা অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে বেশি পছন্দ করি। যেমন গান শোনা মুভি দেখা ফেসবুকিং
ইত্যাদি। এই অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো আমরা প্রতিনিয়ত করে থাকি। তাই আমাদের সকলের
উচিত এগুলো থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা তাহলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে ।
হাল না ছাড়া: যে কোন কাজের জন্য অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ধৈর্যের
সাথে কাজ করলে সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো হাল না
ছেড়ে কাজটি মন দিয়ে করা। যে কোন কাজে হয়তো আপনার কাছে প্রথমে করার সময় অনেক
কষ্টসাধ্য হতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক সব কিছু ধীরে ধীরে
মানিয়ে নেয়। তাই আমাদের উচিত যে কোন কাজে শুরুতেই ব্যর্থ হলেও হাল না ছেড়ে
দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কাজটা চালিয়ে যাওয়া তাহলেই সফলতা আপনার খুব নিকটে।
এভাবে করলে খুব সহজেই স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য ১৫টি খাবার
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে তার সাথে খাবার ও
আমাদের নিয়মিত খেতে হবে। অনেকের আবার বয়স বাড়ার সাথে দিন দিন স্মৃতিশক্তি কমে
যাচ্ছে। যাদের বয়সের তুলনায় স্মৃতিশক্তি অনেক দুর্বল এটা ভালো লক্ষণ নয়।
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার কারণে সাধারণ জীবনযাপনে বাধা প্রদান করে। স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি করার জন্য নানা ধরনের কৌশল রয়েছে যেগুলো নিয়মিত অনুশীলন চর্চা করলে
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুন:
ঘরোয়া ভাবে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
কিন্তু তার জন্য শরীর সুস্থ থাকতে হবে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য, বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাবার নিয়মিত খেতে
হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক খাবার গুলো কি এবং কিভাবে খেলে খুব দ্রুত মস্তিষ্কে
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা যায়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির করার জন্য ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ : আমরা জানি মাছ খেলে
আমিষের পূরণ করে কিন্তু এই মাস খেলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে
বৃদ্ধি করে। এই মাছে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড যা মানুষের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির
ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে। এই মাছ খেলে মানুষের মস্তিষ্কের নতুন কোষ তৈরি করে। এই
মাছ খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি মিলে।
এই মাছ গুলো সমুদ্রে পাওয়া যায় সমুদ্রের বেশ কিছু মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
রয়েছে। যা স্মৃতিশক্তি রাখার জন্য অপরিহার্য। যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কম তারা নিয়মিত খাবার তালিকায় এই মাছগুলো খেলে ধীরে
ধীরে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ব্লবেরি : ব্লবেরিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর
উপাদান যা মস্তিষ্কের কোষ গুলি নতুনভাবে মেরামত করতে সাহায্য করে। এতে আরো রয়েছে
অ্যান্থোসায়ানিন নামক আরও একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা মস্তিষ্কের তাপ
নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা
রাখে। নিয়মিত এই খাবার খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে খুবই উপকারী একটি উপাদান।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কফি: আমরা কমবেশি অনেকেই জানি যে নিয়মিত কফি খেলে
স্মৃতিশক্তি স্টং হয়। কফির মধ্যে প্রধানত দুটি উপাদান রয়েছে ক্যাফেইন ও
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী। ক্যাফেইন নিয়মিত সেবন করলে
মনোযোগ বৃদ্ধি করে। যেকোনো কাজ ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এটি মস্তিষ্কের ডোপামিনের মতো ভালো নিউরোট্রান্সমিটার বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি
ধীরে ধীরে বাড়াতে সহায়তা করে। রেগুলার কফি সেবন করার ফলে পারকিনসন আরো বিভিন্ন
ধরনের রোগের ঝুঁকি কমায় এজন্য নিয়মিত কপি পান করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে হলুদ: মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও হলুদের বিকল্প নেই। হলুদ এমন একটি উপাদান যা মানব দেহের
জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। শরীর সুস্থ রাখতে, শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে,
শরীরের রোগবালাই থেকে নিরাময় পেতে, এবং মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এই
হলুদ। এজন্য আদিম যুগের মানুষ হলুদকে মহাঔষধি বলে। যার কোন জুড়ি মেলা ভার।
কারকিউমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি যৌগ
উপাদান এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কোন রোগে আক্রান্ত
হলে তা দূর করে স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এই উপাদান মস্তিষ্কের
বিষন্নতা দূর করার পাশাপাশি মস্তিষ্কের নতুন কোষ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ব্রোকলি : ব্রোকলি হলো এমন এক ধরনের পুষ্টিকর খাবার।
ব্রোকলি রয়েছে ভিটামিন কে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা স্মৃতিশক্তি মজবুত
করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।ব্রোকলি এরমধ্যে আরও বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যার
মস্তিষ্কের তাপের বিরুদ্ধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব দেয় এবং নানা রকম ক্ষতি
হাত থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে ব্রোকলি উপাদান।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কুমড়ার বীজ : কুমড়ার বীজ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার
এক ধরনের সুপার ফুড এটাতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, আয়রন, কপার আরো বিভিন্ন
ধরনের শক্তিশালী উপাদান রয়েছে কুমড়ো বীজে। যা মস্তিষ্কের ওপর
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রভাব দেয়, যার ফলে মাস্তিষ্কে র্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে
রক্ষা করে। এছাড়াও এসব উপাদান মাইগ্রেনের বিষণ্ণতা ও নানা ধরনের মস্তিষ্ক জনিত
রোগের ঝুকি কমায়। এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
ডার্ক চকলেট স্মৃতিশক্তি বাড়ায় : আপনারা হয়তো সবাই জানেন যে ছোট
বাচ্চারা চকলেট অনেক পছন্দ করে। আপনারা খেয়াল করবেন যে বাচ্চা বেশি চকলেট খায়
অন্য বাচ্চা তুলনায় তার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেশি রয়েছে। ডার্ক চকলেট খেলে
মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ডার্ক চকলেট খুবই কার্যকারী
উপাদান। কারণ ডার্ক চকলেট কোকো পাউডার ফ্লাভোনয়েট, ক্যাফেইন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
এগুলোর মিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে। আর এই উপাদানগুলো স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাই ডার্ক চকলেট খেলে খুব সহজেই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও যাদের ভুলে
যাওয়ার মত রোগ আছে তারা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। কারণ ডার্ক চকলেট ভুলে যাওয়া
রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে আপনার ভুলে যাওয়ার মাত্রা
দিন দিন কমতে থাকবে। আমেরিকার একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যারা ডার্ক চকলেট খান
তাদের স্মৃতিশক্তি চকলেট না খাওয়া মানুষদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি হয়ে থাকে।
বাদাম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: আমরা অনেকেই জানিনা বাদাম আমাদের
স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। বাদামে এমন কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের
স্মৃতিশক্তিকে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণায় দেখা
গেছে যে বাদাম আমাদের হার্ট ভালো রাখে এবং মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে
সহায়তা করে। বাদামের মধ্যে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
যেমন: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন-ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি। এই পুষ্টি
উপাদান গুলো আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। সেই সাথে স্মৃতিশক্তি দিন দিন
বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ভিটামিন-ই আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষকে ফ্রি
রেডিক্যাল এর মত বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ
করেছেন
যে, যারা বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বাদাম খেয়েছেন তাদের স্মৃতিশক্তি খুবই
শক্তিশালী এবং অন্যদের তুলনায় তাদের স্মৃতিশক্তির পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। তাই
আমাদের সকলেরই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে নিয়মিত বাদাম খাওয়া প্রয়োজন।
কমলা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: কমবেশি আমরা সকলেই জানি কমলার মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। অর্থাৎ ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস গুলোর মধ্যে কমলা
অন্যতম। কমলা খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়। আর এই
ভিটামিন সি আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকরী। ভিটামিন সি আমাদের
মস্তিষ্কের জন্য এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই নিয়মিত কমলা
খাওয়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ কয়েক গুনে বৃদ্ধি
পায়।
যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে এবং রোগ ব্যাধিতে কম আক্রান্ত হয়। সেজন্য
আমাদের স্মৃতিশক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এছাড়াও যাদের বয়স দিন দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে তারা নিয়মিত কমলা খেতে পারেন। কারণ নিয়মিত কমলা খেলে মস্তিষ্কে
কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক থাকবে। যার ফলে বয়সের প্রভাবে আপনার ভুলে যাওয়ার প্রবণতা
থাকলে সেটি কমে আসবে। মস্তিষ্কে গঠন স্বাভাবিক থাকবে।
ডিম স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে: আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ডিম
খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। ডিম খেলে স্মৃতিশক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। ডিমের মধ্যে
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন বি-১২ রয়েছে। এই ভিটামিন গুলো আমাদের
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডিমের মধ্যে কোলিন এবং ফুলেট
রয়েছে।
যা আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে ও আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করে।
কোলিন মানব শরীরে নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করে। যার ফলে আমাদের মন ভাল থাকে এবং
স্মৃতিশক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে
নিয়মিত ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
গ্রিন টি স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: আমরা বেশিরভাগ মানুষই চা খেতে খুব পছন্দ
করি। চা ছাড়া আমাদের চলেই না। আমাদের দিনের শুরুটাই হয় চা খাওয়ার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি না চা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
তবে সত্যি কথা হলো চা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। কিন্তু সব চা স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি করতে পারেনা। একমাত্র গ্রিন টি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। গ্রিন টি এর
মধ্যে রয়েছে এল-থেনাইন নামক অ্যামাইনো এসিড।
আপনার পছন্দ হবে এমন আরো পোস্টের তালিকা:
মৃত্যু ব্যতীত সব রোগ থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরা খান
যা আমাদের রক্তের সাথে মিশে মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার GABA এর কর্মক্ষমতা
বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এল-থেনাইন
মস্তিষ্কের আলফা তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সিকেও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে। যা আমাদের
মস্তিষ্ককে ক্লান্ত হতে দেয় না। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ ও সবল
থাকে।
এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি দিন দিন বেড়ে যায়। গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
আমাদের মস্তিষ্ককে ক্ষয় হওয়া থেকে রোধ করে ও মস্তিষ্কের পারকিনসন্সের ঝুঁকি
কমাতে সহায়তা করে। সেই সাথে স্মৃতিশক্তি অনেক গুনে বাড়িয়ে তোলে।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার দোয়া
আমরা অনেকেই জানি দোয়ার মাধ্যমেও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা যায়। অনেকেই ইসলামে
বর্ণিত দোয়া আমল করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেন। এবং সেই দোয়া আমল
করে কাঙ্খিত সফলতা পেয়েছেন। তাই যাদের স্মৃতিশক্তি অনেক দুর্বল তারা চাইলে
ইসলামিক নিয়ম অনুসরণ করে নিচের দোয়াগুলো আমল করে নিজের দুর্বল স্মৃতিশক্তিকে
কয়েক গুনে বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। আসুন জেনে নেই সেই দোয়া গুলো ।
”রাব্বি জিদনি ইলমা “
অর্থ :হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো। { সূরা ত্বহা : আয়াত
১১৪ }
” সুবহা নাকা লা ইলমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা,ইন্নাকা আনতাল আ’লিমুল হাকিম ”
অর্থ: হে আল্লাহ আপনি পবিত্র ! আমরা কোন কিছুই জানিনা, তবে আপনি আমাদের যা
শিখিয়েছেন সেগুলো ছাড়া। নিশ্চয়ই আপনি প্রকৃত জ্ঞান সম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। {
সূরা বাকারা : আয়াত ৩২ }
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত ব্যায়াম করার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন
পুষ্টিকর খাবার ও ওষুধ সেবন করে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা যায়। ঠিক তেমনি
কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো করেও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা যায় । ব্যায়াম করার
ফলে যেমন আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। তেমনি নিয়মিত ব্যায়াম করলে আমাদের
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে ।নিচে বেশ কিছু ব্যায়ামের ব্যাপারে আলোচনা করা
হলো। যেগুলো আপনারা করলে আপনাদের স্মৃতিশক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।
হাটা :কমবেশি আমরা সকলেই জানি হাঁটলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। সুস্থ-সবল
শরীর প্রতিটি মানুষেরই স্বপ্ন। প্রতিটি মানুষই সুস্থতা চায়। প্রতিদিন সকালবেলা ও
রাতে নিয়ম করে নির্দিষ্ট কিছু সময় ধরে হাটাহাটি করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে
এবং সেই সাথে আমাদের স্মৃতিশক্তি আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। কারণ হাটাহাটি করলে
মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। মস্তিষ্কের রক্তনালী গুলো সতেজ থাকে ।
এবং প্রত্যেকটি রক্তনালীতে সঠিক মাত্রায় রক্ত চলাচল করতে পারে। যার ফলে
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেক গুণে বেড়ে যায়। সেই সাথে আমাদের স্মৃতিশক্তি ও দিন
দিন বাড়তে থাকে।তাই যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল তারা চাইলে খুব সহজেই এই হাটার
ব্যায়ামটি শুরু করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রতিদিন এই হাঁটার ব্যায়ামটি
অনুশীলন করলে আপনার দুর্বল স্মৃতিশক্তি কয়েক গুনে বৃদ্ধি পাবে ।
সাঁতার কাটা :সাঁতার কাটাও এক ধরনের ব্যায়াম। নিয়মিত সাঁতার কাটা আমাদের
শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। সাঁতার কাটার ব্যায়ামটি অনুশীলন করলে আমাদের
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ আমরা যখন পুকুর বা নদীতে সাঁতার কাটি তখন আমাদের
শারীরিক পরিশ্রম হয়। সেই সাথে আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া বাড়তে থাকে।
শরীরের ধমনী ও রক্তনালিতে রক্ত চলাচল আগের তুলনায় বেড়ে যায়।
আমাদের শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল ও আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।
যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি
পায় ।তাই প্রতিদিন সাঁতার কাটা ব্যায়ামটি অনুশীলন করলেও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
পাবে।
সাইকেল চালানো: সাইকেল চালানো একটি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ। অনেকেই তাদের
প্রতিদিনের কাজকর্মকে সহজ করতে সাইকেল ব্যবহার করে থাকেন। সাইকেল চালানো এক ধরনের
ব্যায়াম। সাইকেল চালালে আমাদের শরীর গরম হয় এবং শরীরে এক ধরনের
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উৎপন্ন হয়। যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী।
এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত
সাইকেল চালানো ব্যায়াম অনুশীলন করার মাধ্যমে আমরা চাইলেই খুব সহজেই আমাদের
স্মৃতিশক্তিকে বৃদ্ধি করতে পারব।
দৌড়ানো: প্রতিদিন নিয়ম করে দৌড়ালে আমাদের শরীরের এনার্জির পরিমাণ
বৃদ্ধি পায়। যা আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য অনেক দিক থেকেই উপকারী। তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হলো আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। প্রতিদিন যদি আমরা কিছু সময়
ধরে দৌড়াদৌড়ি করি তাহলে আমাদের শরীরের কোষ ও হরমোন গুলো সুস্থ ও সতেজ থাকবে।
যার ফলে আমাদের শরীরে রোগব্যাধি বাসা বাড়তে পারবে না এবং আমাদের শরীর সুস্থ
থাকবে ।
তাছাড়াও প্রতিদিন দৌড়ানোর ফলে আমাদের শরীরে অ্যামাইনো এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি
পায়। এই অ্যামাইনো এসিড আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। অ্যামাইনো এসিডের
প্রভাবে মস্তিষ্কে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সৃষ্টি হয়। যা আমাদের স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি করতে সহায়ক। তাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে আমাদের উচিত নিয়ম করে
প্রতিদিন দৌড়ানো।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কৌশল
অনেকের স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল হয়ে থাকে। কোন কিছুই মনে রাখতে পারে না।
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া অত্যন্ত মারাত্মক একটি সমস্যা। এই সমস্যার ফলে
প্রতিদিনের কাজকর্মে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। যারা চাকরি বা পড়াশোনা করেন তারা
তাদের কাজ ঠিকঠাক ভাবে চালিয়ে যেতে পারেন না।তাই আজকে আমরা জানব স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি করার বেশ কিছু কৌশল সম্পর্কে ।নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো ।
মেডিটেশন: স্মৃতিশক্তি বাড়াতে মেডিটেশন খুবই ভালো একটি উপায়। প্রতিদিন
নির্দিষ্ট একটি সময় অনুযায়ী মেডিটেশন করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। মেডিটেশন
আমাদের মস্তিষ্ককে স্থির ও শান্ত রাখতে সাহায্য করে। মেডিটেশন আমাদের কিছু সময়ের
জন্য হলেও চিন্তা করা থেকে বিরত রাখে। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ
থাকে।মেডিটেশন মূলত এক ধরনের ধ্যান। এই ধ্যান করার ফলে আমাদের মনোযোগ ও স্বচ্ছ
মানসিকতা বৃদ্ধি পায়।
যার ফলে দিন দিন আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। দুর্বল স্মৃতিশক্তিকে
বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন নিয়ম করে মেডিটেশন বা ধ্যান করার কোন বিকল্প নেই। আপনি
নিজে নিজে চাইলে মেডিটেশন করতে পারেন।আবার যদি নিজে না পারেন তাহলে একজন অভিজ্ঞ
যৌগ গুরুর মাধ্যমে মেডিটেশন করার প্রশিক্ষণ নিতে পারেন ।
গান শোনা ও বই পড়া : প্রতিদিন গান শোনা ও বই পড়ার মাধ্যমেও
স্মৃতিশক্তিকে বাড়িয়ে তোলা যায় ।গান শুনলে বা বই পড়লে আমাদের মনোযোগ স্থির
থাকে।সেই সাথে প্রতিদিন গান শোনা ও বই পড়া চর্চা করার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে কাজের
মধ্যে ব্যস্ত রাখা যায়। যার ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়।
মস্তিষ্কে স্বাভাবিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি আস্তে
আস্তে বাড়তে থাকে।
তাই প্রতিদিন গান শোনা ও বই পড়ার অভ্যাস করা উচিত। আমরা যদি গান শোনার ও বই
পড়ার পেছনে সময় ব্যয় করতে পারি তাহলে এটি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হবে। এবং
আমাদের ধৈর্য শক্তি বেড়ে যাবে। ধৈর্য শক্তি বেড়ে যাওয়ার ফলে আমাদের মধ্যে কোন
কিছু নিয়ে হতাশা বা অবসাদের সৃষ্টি হবে না। যার প্রভাবে আমাদের স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি পাবে।
পর্যাপ্ত ঘুম :আমরা সবাই জানি পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরকে
সুস্থ রাখে। শরীর ও মস্তিষ্ককে সুস্থ সবল রাখতে ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। পর্যাপ্ত
পরিমাণে ঘুম হলে মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর হয়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
পায়, মস্তিষ্কের কোষগুলো সতেজ হয়ে ওঠে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, হরমোনের পরিমাণ
আগের তুলনায় অনেক গুনে বেড়ে যায়, ধমনী ও শিরা গুলো সুস্থ সবল থাকে।
যার কারণে আমাদের স্মৃতিশক্তি আগের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। তাই দুর্বল মস্তিষ্ককে
সবল করতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোন বিকল্প নেই। আমরা যদি নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমাই তাহলে
আমাদের স্মৃতিশক্তি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে ।
খাদ্যাভ্যাস :অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ আমাদের মস্তিষ্ককে দুর্বল করে ফেলে।
তাই খাবার খাওয়ার বিষয়ে অনিয়ম করা যাবে না। নিয়ম মত সঠিক টাইমে খাবার খেতে
হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট টাইমে খাবার খেলে আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ থাকবে এবং
আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। কারণ নিয়ম মত খাবার খেলে মস্তিষ্কে বিভিন্ন
ধরনের পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে।
যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
মস্তিষ্কে কোনরকম রোগব্যাধি বাসা বাড়তে পারবে না। যার ফলস্বরূপ আমাদের
স্মৃতিশক্তি দিন দিন বাড়তেই থাকবে। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মত কোন সমস্যার
সৃষ্টি হবে না।
নতুন কিছু করা: আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নতুন কিছু করার মানসিকতা তৈরি
করতে হবে। প্রতিদিন চিন্তা করতে হবে নতুন করে কিছু না কিছু করার। আমরা যদি
প্রতিদিন নতুন করে কিছু করার চিন্তা করি তাহলে আমাদের মস্তিষ্ককে কাজের মধ্যে
ফেলে দেয়া যাবে। আর মস্তিষ্ক প্রতিনিয়ত কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকলে মস্তিষ্ক
সুস্থ সবল থাকবে। যার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের মস্তিষ্কে যখন নতুন কোন কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে তখন আমাদের মস্তিষ্কের
জ্ঞানের পরিধি আগের তুলনায় অনেক বাড়তে থাকবে। যার কারণেও আমাদের স্মৃতিশক্তি
আগের তুলনায় অনেক গুনে বেড়ে যাবে। তাই আমাদের উচিত স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে
প্রতিদিন নতুন কোন কিছু করার চেষ্টা করা।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার উল্লেখযোগ্য কিছু ওষুধের নাম
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া মারাত্মক একটি সমস্যা। যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল
তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এমনকি তারা তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন
পরিচালনা করতেও ব্যর্থ হয়। তাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য ফার্মেসিতে অনেক ধরনের ওষুধ কিনতে পাওয়া যায়।
নিচে আমরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা যায় এমন কিছু ওষুধের নাম উল্লেখ করব।
- Giloba-120
- Monera Serup
- Xinc-B
- Brahmi { Homeopathic medicine }
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার ২৫ টি কৌশল
সম্পর্কে। সেই সাথে আরো জানলাম ব্যায়ামের মাধ্যমে কিভাবে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা
যায়।স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার বেশ কিছু খাবার সম্পর্কেও আমরা জেনেছি। তাছাড়া
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কয়েকটি ওষুধের নামও আমরা জানতে পারলাম।সর্বোপরি কিভাবে
আমরা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে বৃদ্ধি করতে পারব তার বিস্তারিত বর্ণনা
আমরা জানতে পেরেছি। আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার কাঙ্খিত সমাধানটি
খুঁজে পেয়েছেন।
এমন আরো চিকিৎসাভিত্তিক আর্টিকেল পেতে চাইলে আমাদেরকে নিয়মিত অনুসরণ করতে পারেন।
ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত
মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে
অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে করতে ভুলবেন না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url