সর্দি কাশি কেন হয় এবং এটা প্রতিকারের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ উপায়
সুস্থ সবল শরীর প্রতিটি মানুষেরই স্বপ্ন। প্রতিটি মানুষই চায় তার শরীর হোক রোগ বিহীন। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো রোগ বিহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বর্তমানে মানুষ যে সকল রোগে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সর্দি কাশি। তাই আজকে আমরা জানব সর্দি কাশি কেন হয় এবং এর প্রতিকারের উপায় কি।
সর্দি কাশি হলে কি খাওয়া উচিত এবং সর্দি কাশি কেন হয় এই সকল বিষয়ে আজকের আমাদের এই আর্টিকেল। সম্পূর্ণ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
বাংলাদেশ একটি নাতিশীতোষ্ণ দেশ। এদেশের আবহাওয়া কখনো গরম তো কখনো ঠান্ডা। বাংলাদেশের আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। যার ফলে এই আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মানুষের উপরে পড়ে এবং মানুষ বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। মানুষ প্রতিনিয়ত যে সকল রোগে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সর্দি কাশি। তাই আজকে আমরা জানবো সর্দি কাশি কেন হয় এবং এটা প্রতিকারের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
রোগ সম্পর্কে জানলে খুব সহজেই সেই রোগ কে প্রতিকার করা সম্ভব। তাই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে সর্দি কাশি কেন হয় এবং এটা প্রতিকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় খুব ভালোভাবে বুঝানোর চেষ্টা করব। সম্পূর্ণ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট আলোচনা করা হলো:
সর্দি কাশি কেন হয়
আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের আবহাওয়া হলো নাতিশীতোষ্ণ কখনো গরম, কখনো ঠান্ডা, কখনো বৃষ্টি। আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হতে পারলেও আমাদের মানব শরীর সেই আবহাওয়ার সাথে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারেনা। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরে। আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই। সব থেকে বেশি আক্রান্ত হই সর্দি কাশিতে। ছোট থেকে বুড়ো সবাই কম বেশি সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়। যখন অতিরিক্ত গরম পড়ে তখন আমাদের শরীর প্রচুর ঘামতে থাকে। আর এই ঘাম আমাদের বুকে শুকিয়ে গিয়ে আমাদের সর্দি কাশি হয়ে থাকে।
এছাড়াও অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার ফলেও আমাদের সর্দি কাশি হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়াতে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি এবং অতি বৃষ্টি হয়ে থাকে। আর এই বৃষ্টির পানিতে ভিজলেও আমাদের সর্দি কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ হঠাৎ করেই কোন কিছু আমাদের শরীরের পক্ষে মোটেও ভালো নয়। মানব শরীর হলো আরামপ্রিয়। তাই নতুন আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে আমাদের শরীরের দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আর এই দীর্ঘ সময় না পাওয়ার ফলেই আমাদের শরীর রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। মূলত আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিবর্তন সাধনের ফলেই সর্দি কাশি হয়ে থাকে।
সর্দি কাশি কেন হয় এবং এটা প্রতিকারের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিচে দেওয়া হলো
- সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাবেন
- সর্দি কাশি লাগলে তুলসির পাতা খেলে কি হয়
- সর্দি কাশি হলে মধু খেলে কি হয়
- ঘনঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
- সর্দি লেগে নাক বন্ধ হয়ে গেলে করনীয় কি
- ঘরোয়া ভাবে সর্দি ও কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
- বাচ্চাদের সর্দি কাশি বেশি হয় কেন
- সর্দি কাশি হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত
- সর্দি কাশি হলে সরিষার তেল কিভাবে ব্যবহার করবেন
- হালকা সর্দিতে কি ওষুধ খাওয়া উচিত
- সর্দি কাশিতে টক জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত কেন
- সর্দি কাশি হলে প্রথমেই কি এন্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত
- সর্দি কাশি কি ছোঁয়াচে কোন রোগ
- বর্ষাকালে সর্দি কাশি হওয়ার কারণ কি
- অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে কেন সর্দি কাশি হয়
- কোন ধরনের খাবার খেলে সর্দি কাশি হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়
- সর্দি কাশি হওয়ার ফলে শরীরের কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে
- শরীরের কোন ভিটামিনের অভাবে সর্দি কাশি হয়
- অতিরিক্ত সর্দি কাশির ফলে কি শ্বাসকষ্ট হতে পারে
- শিশুদের সর্দি কাশি হলে কি কি ক্ষতি হয়
সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাবেন
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সর্দি-কাশি খুবই স্বাভাবিক একটি অসুখ। আমাদের সবারই কমবেশি সর্দি কাশি হয়ে থাকে। তবে বাচ্চাদের ও বয়স্কদের সর্দি কাশি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। সর্দি কাশি খুব জটিল কোন অসুখ নয়। সর্দি কাশি হলে খুব সহজেই তা নিরাময় করা সম্ভব। অনেকেই সর্দি কাশি হলে অনেক ভয় পেয়ে যান। কিন্তু ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। একটু অসাবধানতা ও খামখেয়ালির কারণে খুব সহজে সর্দি কাশি হতে পারে। সর্দি কাশি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। প্যারাসিটামল একটি পরিচিত ঔষধ। আমাদের সবার ঘরেই কমবেশি প্যারাসিটামল থাকে।
সর্দি কাশি লাগলে প্রথমেই আমাদের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেলে সর্দি কাশি নিরাময় করা সম্ভব। আর সবার প্রথমেই প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়ার কথা এজন্যই বলা হলো যে আমাদের সবার ঘরেই প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সবসময়ই থাকে। নিচে সর্দি-কাশির আরো বেশ কিছু ঔষধের নাম পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করা হলো:
- এন্টিহিস্টামিন
- মন্টিলুকাস্ট
- হিস্টাসিন
- অফকফ
- তুসকা
- তুলসী
- প্যারাসিটামল
- এম কাস্ট, ইত্যাদি।
উপরের এই ওষুধগুলো খেলে আশা করছি সর্দি কাশি ভালো হয়ে যাবে। তবে অবশ্যই একজন রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গুলো সেবন করতে হবে।
সর্দি কাশি হলে তুলসীর পাতা খেলে কি হয়
সর্দি কাশি আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি অসুখ। কমবেশি সবারই সর্দি কাশি হয়ে থাকে। সর্দি কাশি হলে ওষুধই খেতে হবে তার কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। ওষুধের পরিবর্তে এমন অনেক কিছুই আমাদের বাড়ির আশেপাশে রয়েছে যেগুলো খেলে সর্দি কাশি নিরাময় করা যায়। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং কার্যকরী একটি হলো তুলসী পাতা। প্রাচীনকালে মানুষের চিকিৎসার জন্য কোন ওষুধপত্র ছিল না। তখনকার মানুষ বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ের জন্য গাছ-গাছালি ব্যবহার করত। এই গাছ গাছালীর মধ্যেই অনেক প্রাকৃতিক গুনাগুন রয়েছে। যার ফলে অনেক রোগ ব্যাধি খুব সহজেই নিরাময় করা সম্ভব হয়।
ঠিক তেমনি তুলসী পাতার মধ্যে প্রাকৃতিক অনেক গুনাগুন রয়েছে। সর্দি কাশি হলে তুলসী পাতা রস করে হালকা গরম করে নিয়ে সেই রস খেলে সর্দি কাশি সেরে যায়। এভাবে পরপর কয়েকদিন তুলসী পাতার রস গরম করে নিয়ম মত খেলে যত পুরনো সর্দি কাশি হোক না কেন তা খুব সহজেই নিরাময় করা যায়। তাই সর্দি কাশি হলে আমাদের সবার উচিত তুলসী পাতার রস করে সেই রস হালকা গরম করে নিয়ে নিয়ম করে কয়েকদিন সেবন করা। তাহলেই আমাদের সর্দি কাশি থেকে রেহাই মিলবে।
ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
বাংলাদেশের আবহাওয়া এই গরম, এই ঠান্ডা তো এই বৃষ্টি। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিবর্তনের কারণে বা ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে মানব শরীরে নানারকম রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। যার মধ্যে একটি হলো ঠান্ডা লাগা। যখন আবহাওয়া অতিরিক্ত গরম থাকে তখন আমাদের শরীর প্রচুর পরিমাণে ঘামে। আর এই ঘামার ফলে আমাদের শরীরে ঘাম বসে গিয়ে ঠান্ডা লেগে যায়। আবার আবহাওয়া যখন অনেক ঠান্ডা থাকে তখন অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ার কারণে আমাদের ঠান্ডা লাগতে পারে। এছাড়াও বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানিতে ভেজার ফলে ঠান্ডা লাগতে পারে। আর এই ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ হচ্ছে ঘন ঘন আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়া।
যখন যে আবহাওয়া বিরাজ করে সেই আবহাওয়ার প্রভাবে ঠান্ডা লাগার মত সমস্যা দেখা দেয়। আবহাওয়ার এই ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণেই আমাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার সমস্যা হয়। ঠান্ডা লাগলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সঠিক নিয়ম মেনে ঔষধ খেলে ঠান্ডা লাগা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এছাড়াও ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেও ঠান্ডা লাগার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা এবং বৃষ্টির সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করেও ঠান্ডা লাগার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কারণ সচেতনতাই পারে আমাদের এবং আমাদের শরীরকে ভালো রাখতে।
সর্দি কাশি হলে মধু খেলে কি হয়
মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক পুষ্টি সম্পন্ন নানা গুনাগুন। সর্দি কাশি প্রতিরোধ করতে মধু অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মধুর সাথে একটি লেবু কেটে লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে মিক্স করে খেলে সর্দি-কাশির উপশম হয়। চায়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর সৃষ্টি হয়। যার ফলে সর্দি-কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কারণ সর্দি-কাশি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সক্ষম। বলা হয়ে থাকে সর্দি-কাশিতে মধু হলো মহা ঔষধ।
ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিন সকালবেলা এক চামচ করে মধু খাওয়ালে সর্দি-কাশি থেকে দূরে রাখা যাবে। এছাড়াও মধু খেলে মানব শরীর অনেক গরম থাকে। যার ফলে খুব সহজে শরীরে ঠান্ডা লাগতে পারে না। আর শরীরে ঠান্ডা না লাগলেও সর্দি কাশি হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। প্রাচীনকালে যখন কোন ঔষধ ছিল না তখন মানুষ মধুকে সর্দি-কাশির মহা ঔষধ হিসেবে সেবন করতেন। মধু সেবনের ফলে যত পুরাতন সর্দি কাশি হোক না কেন তা খুব সহজেই নিরাময় হবে।
মধু সরাসরি খেলেও সর্দি-কাশির উপশম হয়। আবার গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলেও সর্দি কাশি ভালো হয়। সর্দি কাশি প্রতিরোধে সর্বোত্তম ফলাফল পেতে মধুর সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি অল্প সময়ের মধ্যে নিরাময় হবে। তাই আমাদের সকলের উচিত নিয়মিত মধু সেবন করা। মধু সেবন করলে শুধু সর্দি কাশি নয় অনেক রোগ থেকেই মুক্তি মিলবে।
সর্দি লেগে নাক বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় কি
প্রতিটা মানুষেরই সর্দি কাশি হয়ে থাকে। সর্দি লাগলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ওষুধ খেলেই খুব সহজেই সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সর্দি লাগার ফলে অনেক সময় দেখা যায় আমাদের অনেকেরই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা নাক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে থাকে। তখন আমাদের নিঃশ্বাস নেয়া অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। নাক বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের সবার প্রথমেই হালকা গরম পানি খাওয়া উচিত। গরম পানি খেলে নাক অনেকটা ক্লিয়ার হয়ে যেতে পারে। গরম পানি খাওয়ার পরেও যদি নাক বন্ধ থাকে তাহলে গরম পানির সাথে এক চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে নাক বন্ধের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
আমরা স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারব। এছাড়াও ঘরোয়া টোটকা হিসেবে আমরা চাইলে খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারি। সরিষার তেলের সাথে দুই তিন কোয়া রসুন, কিছুটা কালোজিরা মিশিয়ে একসঙ্গে হালকা গরম করে নিয়ে বুকে, পিঠে, গলায় এবং হাত পায়ে মালিশ করলে সর্দি অনেকটা কমে যাবে এবং নাক বন্ধ হয়ে থাকলে সেটা সেরে যাবে। এভাবে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে সর্দিতে নাক বন্ধের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আবার অনেকের ঘরোয়া টোটকা তে কোন কাজ নাও হতে পারে।
তাই তখন আমাদের উচিত বাজারে যে ঔষধ গুলো পাওয়া যায় সেগুলো খাওয়া। ওষুধ খেলেও নাক বন্ধের সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের উন্নত মানের ড্রপ পাওয়া যাচ্ছে। যা নাকের ছিদ্রের মধ্যে কয়েক ফোটা দিয়ে দিলেই 10 থেকে 15 সেকেন্ডের মধ্যেই নাক বন্ধ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। এছাড়া চাইলে অধিক কার্যকরী ঘরোয়া টোটকা হিসেবে রসুন ব্যবহার করা যেতে পারে।
রসুন হালকা তেলে কিছুটা ভেজে নিয়ে সেই ভাজা রসুন নাকে ধরলে রসুনের তীব্র গন্ধে নাক বন্ধ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কারণ রসুনের রয়েছে অ্যান্টিবডি। যা যেকোনো রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। তবে এসব করার পরেও যদি সর্দিতে নাক বন্ধের সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বাচ্চাদের সর্দি কাশি বেশি হয় কেন
ছোট বাচ্চাদের সবসময়ই নানান ধরনের রোগ লেগেই থাকে। তারমধ্যে বেশি হয়ে থাকে সর্দি কাশি। ছোট বাচ্চারা সুযোগ পেলেই পানি নিয়ে খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। কারণে-অকারণেও পানি দিয়ে তাদের শরীরকে ভেজায়। এই অতিরিক্ত পানি ঘাটার ফলে সর্দি কাশি বাচ্চাদের পিছু ছাড়ে না। বেশিরভাগ সময়ই ছোট বাচ্চারা সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও বাচ্চারা ধুলোবালি নিয়ে খেলাধুলা করে থাকে। আর আমরা সবাই জানি সর্দি-কাশি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তাই ছোট বাচ্চারা ধুলোবালি নিয়ে খেলা করার কারণে খুব সহজেই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়।
তাছাড়াও বাচ্চারা তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে মোটেও সচেতন নয়। তারা বুঝতেই পারেনা কোনটা তাদের শরীরের জন্য ভালো এবং কোনটা তাদের শরীরের জন্য খারাপ। এই অসচেতনতা বোধের কারণেও বাচ্চারা নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তার মধ্যে বেশি আক্রান্তিত হয় সর্দি কাশিতে। সর্দি কাশি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয় তবে মায়ের সর্দি কাশি হলে বা ঠান্ডা লাগলে সেই মায়ের বুকের দুধ যদি বাচ্চার খায় তাহলে সেই বাচ্চারও সর্দি কাশি হতে পারে। ছোট বাচ্চারা সবসময়ই খেলাধুলার করে থাকে। আর এই খেলাধুলা করতে গিয়ে তাদের শরীর অনেক ঘেমে যায়।
এই ঘাম বাচ্চাদের শরীরে শুকিয়ে গিয়ে বুকে ঠান্ডা লেগে যায়। আর এই ঠান্ডা থেকেই পরবর্তীতে বাচ্চারা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। ছোট বাচ্চারা একটু পরপরই প্রসাব করে। যার ফলে তাদের প্যান্ট ভিজে থাকে। আর এই ভেজা প্যান্ট পড়া অবস্থায় দীর্ঘ সময় থাকলে বাচ্চাদের সর্দি কাশি হয়। মূলত বাচ্চাদের অনেক সাবধানে রাখা উচিত। তাদের যত্ন সঠিকভাবে করতে হয়। মায়ের একটু অসচেতনতা এবং যত্নের অভাবে ছোট বাচ্চারা সহজেই সর্দি কাশির মতো রোগে আক্রান্ত হয়।
সর্দি কাশি হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত
সর্দি কাশি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এক ধরনের ভাইরাসের প্রভাবে সর্দি কাশি হয়। আর ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য আমাদের উচিত ভাইরাস প্রতিরোধী পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। সর্দি কাশি হলে টক জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন। কারণ টক জাতীয় খাবার ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। টক জাতীয় খাবার সর্দি কাশির ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানব শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। তাই আমাদের সর্দি কাশি হলে মালটা, আনারস, কামরাঙ্গা, কাঁচা ও পাকা তেতুল, করমচা, টকবরই, বিভিন্ন ধরনের টক আচার, ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়া উচিত।
এছাড়াও বাজারে যে মৌসুমী বিভিন্ন রকমের সবজি পাওয়া যায় সেই সবজিগুলো দিয়ে সুপ তৈরি করে খেতে হবে। তাহলে সর্দি কাশিতে অনেকটা আরাম পাওয়া যাবে। তরকারিতে বেশি বেশি রসুন খেতে হবে। কারণ রসুনে রয়েছে ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা। সর্দি কাশি হলে সব থেকে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। এছাড়া মিষ্টি কুমড়ো, চাল কুমড়ো, করলা, লাল শাক, কচু শাক, চিচিঙ্গা, গোল আলু এবং মিষ্টি আলু বেশি করে খাওয়া দরকার। সর্দি কাশিতে এই খাবারগুলো খেলে সর্দি কাশি থেকে অতি দ্রুত নিরাময় পাওয়া যাবে।
সর্দি কাশি হলে প্রথমেই কি এন্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত
সর্দি কাশি খুবই সাধারণ একটি অসুখ। তাই আমরা চাইলেই খুব সহজেই এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। সর্দি কাশিতে ওষুধ খেতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ওষুধের বিকল্প হিসেবে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেও সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সর্দি কাশিতে ঔষধ হিসেবে প্রথমে আমরা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারি। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেলেই সর্দি কাশি সেরে যাওয়ার কথা। তবে প্যারাসিটামল ট্যাবলেটে যদি কাজ না হয় তাহলে আমরা এন্টিহিস্টামিন, হিস্টাসিন, এম কাস্ট ইত্যাদি ট্যাবলেট খেতে পারি।
এছাড়াও ট্যাবলেটের পরিবর্তে আমরা অফকপ, তুসকা, তুলসী এসব সিরাপ ও সেবন করতে পারি। একটা কথা সবসময়ই মনে রাখা উচিত কোন রোগের শুরুতেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া মোটেও উচিত নয়। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে রয়েছে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। যা আমাদের শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই সর্দি কাশি হলে প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবেনা। যথাসম্ভব এন্টিবায়োটিক পরিহার করে চলাই উত্তম। তবে উপরে বর্ণিত ঔষধ গুলো খাওয়ার পরেও যদি সর্দি কাশি ভালো না হয় তাহলে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে।
সর্দি কাশি কি ছোঁয়াচে কোন রোগ
আমরা অনেকেই ভেবে থাকি সর্দি-কাশি বোধহয় একটি ছোঁয়াচে রোগ। কেউ সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলে আমরা যদি তার সংস্পর্শে যাই তাহলে হয়তো আমাদেরও সর্দি কাশি হবে। তবে এটি আমাদের সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। সর্দি কাশি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। বরং সর্দি কাশি হল একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ভাইরাসের প্রভাবে মানব শরীর সর্দি কাশিতে আক্রান্তিত হয়। যার শরীর যত দুর্বল সে তত বেশি সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে। যেহেতু সর্দি কাশি একটি ভাইরাসজনিত রোগ।
তাই যার শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষমতা কম সে খুব সহজেই সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়। আর আমাদের কাছে সর্দি-কাশি খুবই পরিচিত একটি অসুখ। আমরা চাইলে সহজেই এটিকে প্রতিরোধ করতে পারি। ওষুধের মাধ্যমে যেমন সর্দি কাশি প্রতিরোধ করা যায়। ঠিক তেমনি বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেও সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পরিশেষে আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখা উচিত যে সর্দি কাশি মোটেও কোন ছোঁয়াচে রোগ না বরং এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ।
শিশুদের সর্দি কাশি হলে কি কি ক্ষতি হয়
ছোট শিশুরা খুব সহজেই সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুরা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে তাদের শরীরে নানা ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশুদের সর্দি কাশি হলে তাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চারা নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এছাড়াও সর্দি কাশির ফলে শিশুদের মুখে অরুচি দেখা দিতে পারে। যার ফলে শিশুরা খাবার খেতে চায় না। শিশুদের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় সর্দি কাশি লেগে থাকলে শিশুদের হাঁপানির মত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
শিশুদের সর্দি কাশি হওয়ার ফলে তাদের শরীরে জ্বর আসতে পারে। তাছাড়াও সর্দি-কাশির প্রভাব শিশুদের লিভারের উপরও পড়তে পারে। শিশুদের শরীর শুকিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত সর্দি কাশি লেগে থাকার কারণে শিশুদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিত শিশুদের অত্যন্ত যত্নে লালন-পালন করা এবং শিশুদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সচেতন থাকা।
শরীরের কোন ভিটামিনের অভাবে সর্দি কাশি হয়
সর্দি কাশি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। প্রায় ২০০ রকমের ভাইরাসের প্রভাবে সর্দি কাশি হয়ে থাকে। শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে সর্দি কাশি বেশি হয়। ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে সর্দি কাশি প্রতিরোধের সক্ষমতা অনেক কমে যায়। যার ফলে কিছুদিন পর পরই মানব শরীর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে। তাই সর্দি কাশি থেকে রেহাই পেতে চাইলে শরীরে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। ভিটামিন সি এর পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারগুলো বেশি বেশি করে খেতে হবে।
তাহলেই আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করতে পারব। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি মজুদ থাকলে সর্দি কাশির ভাইরাস আমাদের শরীরকে সংক্রমিত করতে পারবেনা। আমাদের শরীর থাকবে সর্দি কাশি বিহীন। অতএব একমাত্র ভিটামিন সি এর অভাবে শরীরে সর্দি কাশি হয়। কারণ মানব শরীরে অনেক রকম ভিটামিনের প্রয়োজন। একেক ভিটামিনের অভাবে শরীরে একেক ধরনের রোগের দেখা দেয়। ঠিক তেমনি ভিটামিন সি এর অভাবে সর্দি কাশি হয়।
লেখকের মন্তব্য: উপরে আমরা সর্দি কাশি কেন হয় এবং এটা প্রতিকারের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ উপায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন সৃজনশীল এবং শিক্ষামূলক পোস্ট পেতে চাইলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url