মাশরুমের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক বিন্দু আপনারা হয়তো মাশরুমের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। মাশরুম খুব পুষ্টিকর একটি খাবার, এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন খনিজ পদার্থ রয়েছে। মাশরুমে রয়েছে আমিষের পরিমাণ একটু বেশি। মাশরুম খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। অনেকেেই মাশরুম চাষ করতে চান, কিন্তু সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। 
মাশরুমের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে
অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরেও। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। মাশরুমের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে এবং কিভাবে চাষ করতে হয়, বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

বর্তমান যুগে অনেক মানুষ রয়েছে মাশরুমের পুষ্টিগু গুন সম্পর্কে জেনে মাশরুম চাষ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে মাশরুম চাষ আর করা হয় না। অনেকে আবার মাশরুম সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই যে এটি আবার কোন ধরনের উদ্ভিদ। মাশরুম খেলে কি হয়, মাশরুম দেখতে কেমন, খেতে কেমন লাগবে, কোন ধরনের মাশরুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, অনেকের আবার প্রশ্ন মাশরুম কি রান্না করে খায়, 

সূচিপত্র:-মাশরুম খেলে কি কি ভিটামিন পাওয়া যায়। মাশরুমের দাম কেমন, মাশরুমের কতগুলো জাত রয়েছে। মাশরুম চাষ করার জন্য কোন ধরনের মাটি প্রয়োজন, কোন ঋতুতে মাশরুম চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। মাশরুমের আরো পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে জানতে ভালোভাবে বুঝতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। নিচে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মাশরুম বলতে কি বুঝায়

মাশরুম একটি পুষ্টিকর সবজি, কিন্তু মাশরুম সবজির মতো মাটিতে জন্মায় না। আমরা অনেকেই নিন্মশ্রেণীর ছত্রাক কে মাশরুম ভেবে ভুল করি। জীবন ধারনের জন্য এরা জৈবিক বস্তু অর্গানিক মাটারো থেকে প্রয়োজনে পুষ্টি গ্রহণ করে। মধ্যযুগ থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে মাশরুমে চাষ শুরু হয়। দেশের বড় বড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অধীনে দুটি কালচারের মাসরুম উৎপাদন স্থাপিত হয়।

 সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে উদ্যোক্ত হওয়ার পাশাপাশি চাষীদেরও মাশরুম চাষ করা শিখায়। এভাবে কারিগরী সহায়তা নিয়ে প্রথম মাশরুম চাষ শুরু করে। মাশরুমে যেমন রয়েছে পুষ্টিগুণ তেমনি খেতেও সুস্বাদু হয়।

মাশরুম মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন

মাশরুমের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই মাশরুম কেমন দেখতে অনেকে ভাবে জঙ্গলে যে ছত্রাকগুলো জন্ম নে,য় আমরা অনেকে এটাকে মাশরুম বলে থাকি। মাশরুম এক ধরনের উদ্ভিদ যা মাটিতে জন্মায় না। মাশরুমে অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। যা মানব দেহের গঠন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মাশরুমে রয়েছে পলিফেনলও সেলেনিয়াম নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 


অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর সাথে সালফার ও থাকে এই উপাদানগুলো থাকার জন্য শরীরে ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে যেমনই স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রে, ক্যান্সার ও হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশে কমে যায় নিয়মিত মাশরুম খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে থাকা প্রোটিন মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। মাশরুমের হয়েছেন সব ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টি সমাহার মাশরুম কে বলা হয়।

ভিটামিন মিনারেল প্রোটিন আমিষ, অ্যামোনিয়া এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এগুলো থাকার ফলে মাশরুম খেলে শরীরে সব পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। এইজন্য মাশরুম মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

মাশরুমে কয় ধরনের জাত রয়েছে

পৃথিবীতে মাশরুমের কয়েক হাজার জাত রয়েছে। যার মধ্যে হাতে গোনা ৯ থেকে ১০টি জাতের চাষাবাদ হয়ে থাকে। মাশরুম চাষ করার জন্য তাপমাত্রা ও আদ্রতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাপমাত্রা ও আদ্রতা ঠিক না থাকলে মাশরুম চাষ করা যাবে না। বাংলাদেশের তাপমাত্রা ও আদ্রতা মাশরুম চাষ করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশে মাশরুম চাষ হয়, মাশরুম চাষ উপযোগী মাশরুমের গুলো জেনে নিন।
  • খড় মাশরুম
  • ঝিনুক মাশরুম
  • দুধ মাশরুম
  • কান মাশরুম
  • বোতল মাশরুম
  • তাপ সহনশীল বোতল মাশরুম
  • শীতাকে মাশরুম
  • মিল্ক হোয়াইট মাশরুম
  • ওয়েস্টার মাশরুম
  • গুটি বা বাটন মাশরুম

মাশরুম কি ঔষধি সবজি

মাশরুম এমন একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত মাশরুম খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি মিলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও টিমার জন্ডিস, আরো প্রভৃতি ব্যাধির প্রতিরোধক করে। মাশরুম একটি হালাল পুষ্টিকর খাদ্য। যা ঔষধি গুন সম্পন্ন। নিয়মিত মাশরুম খেলে শারীরিক ও মানসিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাশরুম বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় কেউ সালাত বানিয়ে খায় কেউ স্যুপ বানিয়ে খায়। 

বিভিন্ন ধরনের সবজির সাথে মাশরুম খুব সহজেই রান্না করে খাওয়া যায়। এতে সবজির পুষ্টিগুণ আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় ।মাশরুমে রয়েছে শর্করা ও চর্বি যা শরীরে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। মাশরুম খাওয়ার ফলে কিডনি সমস্যা দূর করে। আমাশয় হয় না, চুল পড়া বন্ধ করে, এইজন্য মাশরুম কে ওষুধই সবজি বলা হয়।

গর্ভবতী মা ও শিশু মাশরুম খেলে কি হয়: মাশরুমে রয়েছে আমিষ শর্করা ও চর্বি ভিটামিন মিনারেলস আরো বিভিন্ন পুষ্টির সমন্বয় যা মা ও শিশুর ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে। এইজন্য গর্ভকালীন সময়ে মাশরুম খাওয়া উচিত।

চর্মরোগ প্রতিরোধ: শরীরে নানা ধরনের চরম রোগ নিরাময় করতে মাশরুম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এইজন্য নিয়মিত মাসরুম খাওয়া উচিত।

দাঁত ও হাড় গঠন: মাশরুম খেলে দাঁত মজবুত হয়। হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারণ মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ডি, যা দাঁত হাড়ের গঠন মজবুত করেন।

হাইপার টেনশন: মাশরুমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ যার শরীর কে সুস্থ সবল রাখে এনার্জি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত মাশরুম খেলে টেনশন থেকে মুক্তি মিলে। কোন বিষয়েই তাড়াতাড়ি হাইপার হয় না। কারণ মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন ১২ বেশি থাকায় স্নায়ুতন্ত্রে ও স্পাইনাল কর্ড স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: মাশরুমে রয়েছে খনিজ লবণ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

মাশরুমের খাওয়ার ৮টি পুষ্টিগুণ

  • মাশরুম খাদ্য হিসেবে অতুলনীয় প্রাচীনকাল থেকেই পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু হালাল দামি খাবার হিসাবে পরিচিত।
  • মাশরুম প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি, কারণ যে কোনো সব্জির সাথে বিভিন্ন উপায়ে রান্না করা যায়। প্রতি একশ গ্রাম মাশরুম থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম, মিনারেলস, খনিজ পদার্থ, ও লৌহ রয়েছে এইজন্য মাশরুম খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখে।
  • মাশরুমে শর্করার পরিমাণ কম থাকায় নির্মশক্তি সম্পন্ন খাবার বলা হয় মাশরুম কে। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা চর্বির তুলনায় খুব কম। যা শরীরের জন্য প্রয়োজন. এতে এসিড ও লিনোলোয়িক অ্যাসিড রয়েছে।
  • নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদরোগীদের খুব উপকার
  • বহুমূত্র রোগের জন্য মাশরুম আদর্শ খাবার

মাশরুম পাউডার খেলে কি কি উপকার হয়

মাশরুমের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্ক হলো বিভিন্ন ধরনের সবজি সাথে মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। তেমনি মাশরুম পাউডার করে খেলেও পুষ্টিগুণের শেষ নেই। মাশরুম পাউডার করে খেলে শরীরে ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করে। যেমন জরায়ুতে সমস্যা হলে মাশরুম পাউডার খেলে খুব সহজেই নিরাময় হয়। অনেকের আবার পিরিয়ডের সমস্যা রয়েছে। যারা এই সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত মাশরুম পাউডার ও কাঁচা পেঁপের রস মিশিয়ে খেলে পিরিয়ড নিয়মিত হবে। 

মাশরুমে কম মাত্রায় লৌহ রয়েছে যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। মাশরুমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাত্রা রয়েছে যা পাউডার করে সকালে এক গ্লাস পানির সাথে পান করলে আপনার বয়সের ছাপ বলিরেখা এমনকি যারা ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকবে। ঝকঝকে তকতকে ত্বক পেতে হলে নিয়মিত মাশরুম পাউডার খেতে পারে এটি ত্বকের জন্য খুব কার্যকারী একটি উপাদান। 

মাশরুম পাউডার খাওয়ার ফলে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা সকাল বেলা খালি পেটে মাশরুম পাউডার খেলে এ সমস্যা থেকে নিরাময় পাবেন। হাই প্রেসার কমায়, যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে অনেক চিকিৎসা করার পরও ভালো ফলাফল পাননি তারা নিয়মিত মাশরুম পাউডার সকালে খালি পেটে দুই চামচ মাশরুম পাউডার গুলিয়ে খেতে হবে। 

অবশ্যই ঘুমানোর আগে আরো একবার খেতে পারেন এতে খুব দ্রুত এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। মাশরুম পাউডার খেলে যাতে শরীরে কিডনিতে পাথর হয় স্পট পরে তারা নিয়মিত মাশরুম পাউডার খেতে পারেন এতে পাথর হলে গলে যাবে, কিডনির স্পট দূর হয়ে যাবে। যাদের অতিরিক্ত চুল পড়ে যাচ্ছে, পরবর্তীতে চুল গজাতে সমস্যা হচ্ছে, তারা নিয়মিত মাশরুম পাউডার খেতে পারে এই সমস্যার সমাধান পাবেন। 

মাশরুম একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার যা মানব শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং ইসলামী মাশরুম খাওয়া কথা বলা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মাশরুম খেতে খুব পছন্দ করতেন। আমাদের শরীরকে সুস্থসবল ও রোগ প্রতিরোধক রাখতে নিয়মিত মাশরুম খাবেন।

লেখক এর মন্তব্য

মাশরুমের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে অনেকেরই অজানা ছিল ।মাশরুম কিভাবে চাষ করতে হয়, মাশরুম কোথায় চাষ হয়, মাশরুম কিভাবে রান্না করে খেতে হয়, মাশরুম কোন সবজির সাথে রান্না করতে হয়, মাশরুমে কি কি ভিটামিন রয়েছে, মাশরুম খেলে সত্যি কি শরীর সুস্থ থাকে, ও কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ইতিমধ্যেই আপনারা মাশরুমের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গিয়েছেন। মানব শরীরের জন্য মাশরুম অত্যন্ত প্রয়োজন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা হয়তো জানতে পেরেছেন। 

মাশরুম একটি হালাল খাবার। আশা করি মাশরুম নিয়ে আপনাদের ভুল ধারণা নিবারণ হয়েছে। আশা করছি যে আর্টিকেলটি পড়ে। আপনারা খুব উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত আমার সাথে থাকার জন্য আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। ভালো লাগলে নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url