খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
খালি পেটে বেল খেলে কি উপকার পাওয়া যায় আপনারা হয়তো অনেকেই এ বিষয়ে জানেন কি? অনেকে তো বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও জানেন না, বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি খুব আশ্চর্য হবেন যে সামান্য এই ফলটিতে এত পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে।
বেলে কি কি পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো সম্পূর্ণ বিষয় জানতে আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
পেজ সূচিপত্র ঃখালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা
বেলের সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণা গুণ পেতে নিয়মিত খালি পেটে বেল খেতে পারেন। কারণ খালি পেটে বেল খেলে অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। তাহলে এবার চলুন কিভাবে খালি পেটে বেল খেলে উপকার পেতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
- সকালবেলা খালি পেটে বেল খেলে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয় বেলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এর উপাদান রয়েছে, সে হিসাবে এটি আপনার শরীরের ইউমিন সিস্টেমের শক্তিশালী করে তোলে।
- খালি পেটে বেল খাওয়া আপনার ত্বকের জন্য খুব উপকারী কারণ বেলে রয়েছে ভিটামিন সি ও কোলাজেনের উপাদান যা আপনার ত্বককে উজ্জল করতে সাহায্য করবে।
- যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য বেল খুব উপকারী একটি উপাদান। কারণ বেলের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্সি কম যা আপনার শরীরে ধীরে ধীরে শর্করা কমাতে থাকে ফলে সকালে খালি পেটে বেল খেলে আপনার শরীরের রক্তের শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণের এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ভীষণ উপকারী।
- আপনারা যদি প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে খালি পেটে বেল খেতে পারেন। তাহলে এটি সারা দিনের জন্য আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি সরবরাহ করতে থাকে।
- নিয়মিত খালি পেটে বেল খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসাবে কাজ করে। এতে করে আপনার শরীরে ভিতর থেকে পরিষ্কার হয় এবং এটি শরীরের প্রক্রিয়া বাড়ায়।
- যারা ওজন নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন তারা সকালে খালি পেটে বেল খেতে পারেন। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট কে ভর্তি রাখে। এবং অন্যান্য খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে আসে, এতে করে আপনার ওজন দিন দিন কমতে থাকবে।
- বেলে উচ্চ পরিমাণ ফাইবারে সম্পৃক্ত হওয়ায় সকালে খালি পেটে বেল খেলে এটি আপনার হজমতন্ত্রকে সহজ করে এবং সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
খালি পেটে বেল খাওয়ার অপকারিতা
খালি পেটে বেল খাওয়ার অপকারিতা হাতে গোনা কয়েকটি রয়েছে। সবগুলোই উপকারিতা দিয়ে ভরা। খালি পেটে বেল খাওয়ার ফলে উপকারিতার পাশাপাশি আপনার শরীরে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাহলে চলুন জেনে নেই,সমস্যা গুলো কি কি।
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বেল খেলে আপনার রক্তচাপে সমস্যা হতে পারে।বিশেষ করে যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। কারণ বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম এর উপাদান। আর এই সোডিয়াম অতিরিক্ত গ্রহণ করলে সেটি উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
- বেলে রয়েছে উচ্চ মাধ্যমের ফাইবার যা অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে আপনার শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে খালি পেটে বেল খেয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে এটি হতে পারে।
- বেলে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার এবং পলিফেনল থাকে। যার ফলে খালি পেটে বেল খেলে আপনার পেট ফাঁপা বা এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- খালি পেটে বেল খেলে একটি আপনার পেটে অতিরিক্ত গ্যাস এবং পেটের অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
- নিয়মিত খালি পেটে বেল খাওয়ার ফলে অনেকের আবার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় এলার্জির প্রক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- খালি পেটে বেল খেয়ে এর অপকারিতা এড়াতে আপনারা নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত পরিমাণ সঠিক সময়ে খেতে হবে। তবে এর অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশি পাবেন আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
বেলের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
খালি পেটে বেল খাওয়ার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা এবং অল্প কিছু অপকারিতা রয়েছে। আজকে আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানাবো বেলে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে তাহলে চলুন জেনে নেই বেল আমাদের শরীরে কি কি উপকার করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেঃ বেল খাওয়ার ফলে ভিটামিন সি আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। এবং শরীরকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- শরীরের তাপমাত্রা কমাতে বেল সাহায্য করেঃ এ সময় প্রচন্ড গরমে শরীরে প্রশান্তি আনতে আপনি নিয়মিত বেলে শরবত খেতে পারেন এতে শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে বেলের শরবত।
- পচনতন্ত্রের সহায়ক হিসেবে কাজ করেঃ আপনারা জানতে অবাক হবেন বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার ও টেনিক উপাদান যা আপনার হজম ক্রিয়া সহজ করে। এতে করে আপনার পাকস্থলীর ক্যাশ এসিডিটি এবং হজম সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা খুব সহজে দূর করতে পারে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে বেল খুব উপকারীঃ বেলের শরবত ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। কারণ বেলে লাইসেন্স ইনডেক্স কম থাকার কারণে এটি আপনার শরীরের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেলঃ বেলে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে যা খেলে আপনার পেটে হজমের সমস্যা দূর হবে। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সহজে দূর হবে।
- শরীরকে ফ্রি রেডিকেল মুক্ত রাখেঃ বেলে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্য আপনার শরীরে ফি রেডিকেল গুলোকে ধ্বংস করে। যা শরীরের কোষের ক্ষতি কমায় এবং শরীরের ক্ষতিকর কোষ বৃদ্ধি করতে বাধা প্রদান করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বেল সাহায্য করেঃ নিয়মিত বেল খাওয়ার ফলে এটি আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে, কারণ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- ত্বকের শুষ্কতা কমাতে বেল খুব উপকারীঃ বেল খাওয়া ত্বকের জন্য খুব উপকারী। কারণ নিয়মিত বেল খেলে এটি আপনার ত্বকের জালা ত্বকের শুষ্কতা এবং একনি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এর উপাদান যা আপনার ত্বকের উচ্চতা বাড়াতে কাজ করে।
- ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করেঃ এই ফলে রয়েছে এন্টি প্রোলিফিরেটিভ ও আন্টি মুটাজেন উপাদান। এইজন্য নিয়মিত খেলে আপনার শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধ শক্তি অনেকটা বৃদ্ধি পাবে।
- বেলের ঔষধি গুনাগুনঃ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, বেল রক্তক্ষরণ,রক্তবমি, অ্যাজমা, পানি বসন্ত, মাড়ির প্রদাহের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত করা হয় আরো বিভিন্ন ওষুধ বানাতে খুব কার্যকরী।
- যক্ষ্মার প্রতিশোধক হিসেবে বেল খুব কার্যকারীঃ পাকা বেল রয়েছে এন্টি মাইক্রোবায়ন উপাদান। যা যক্ষা কমাতে বেশ কার্যকরী।
- মৃগী রোগের সহায়ক হিসেবে বেলঃ মৃগী রোগের উপশমে বেলের ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে বেলের রস মৃগীরোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মৃগী রোগের সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বেল ফল।
- কিডনির সুরক্ষায় বেলঃ আপনার যদি কিডনি জনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি বেল খেতে পারেন। কারণ বেলের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আপনার কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। কিডনির স্পট পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- আলসার ও ডায়রিয়া সারাতে বেলের অবদানঃকাঁচা বেল যেমন আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তেমনি অপরদিকে পাকা বেল আপনার ডারিয়া প্রতিরোধে ও কাজ করে। আবার পাকা বেলে রয়েছে ফাইবার যা আপনার আনসার রোধে বিশেষভাবে কার্যকারী।
- শরীরে এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করেঃ আপনি যদি শারীরিক দুর্বল তাই ভোগেন। অথবা শরীর অনেক দুর্বল হয়ে থাকে তাহলে আপনি শরীরে এনার্জি বাড়াতে বিলকে সঙ্গী করে নিতে পারেন। বেলে প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি রয়েছে যা আপনার এনার্জি বৃদ্ধি করতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে বেলের শরবত খুব উপকারী।
- মৌলিক পুষ্টির উপাদান হিসেবে আপনি বেলকে বেছে নিতে পারেন।
- আর্থাইটিস রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম
পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম কি? খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা আপনাকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। পাকা বেল খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। পাকা বেল খাওয়ার সময় সে নিয়ম গুলো মেনে বেল খেলে আপনি স্বাস্থ্য উপকারিতা বেশি পাবেন। তাহলে চলুন পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি জেনে নিন।
- প্রথমে পাকা বেল সংগ্রহ করুনঃ বেল খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনি একটি সম্পূর্ণ পাকা বেল সংগ্রহ করবেন। পাকা বেল সাধারণত হালকা হলুদ ভাব বা কমলা বর্ণের হয়ে থাকে।
- বেল ধুয়ে নিনঃ এবার বেলটিকে খাওয়ার আগে ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। যাতে করে বেলের গায়ে মাটি বা অন্যান্য জীবাণু না থাকে।
- বেল কাটার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুনঃ আপনারা তো জানেন বিলের উপরে অংশ অনেক শক্ত এজন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে বেল কাটুন।তাছাড়াও আপনারা বেলটি ফাটিয়ে খেতে পারেন এতে বেল চাঁদ আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
- বীজ অপসারণ করুনঃ বেলের ভেতরে ছোট ছোট সাদা বা বাদামি রঙের বীজ থাকে। চারিদিকে আঠার আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে যা খাওয়ার জন্য উপযোগী নয়। এইজন্য বীজগুলোকে বের করে ফেলুন।
- সরাসরি বেল খাওয়াঃ এবার আপনি বেলটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। আপনি চাইলে পাকা বেল সরাসরি খেতে পারেন আবার শরবত করেও খেতে পারেন। কারণ পাকা বেল খেতে অনেক সুস্বাদু ও মিষ্টি হয়।
- বেলের শরবত হিসেবে খেতে পারেন।
- বেলের ম্মুদি তৈরি করে খেতে পারেন।
- বেলের মোরব্বা বানিয়ে খেতে পারেন
- বেল দিয়ে কেক তৈরি করে খেতে পারেন।
- বেল দিয়ে আইসক্রিম বানিয়ে খেতে পারেন।
- বেলের কাস্টার্ড তৈরি করে খেতে পারেন।
পাকা বেল আপনি কিভাবে কোন নিয়মে খাবেন। তার বেশ কিছু উপায় জানিয়ে দিলাম। এগুলোর মধ্যে আপনি আপনার সুবিধামতো যেকোনো উপায়ে তৈরি করে খেতে পারেন, আশা করছি আপনার ভালো লাগবে।
কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম কি আপনারা অনেকেই জানেন না কিভাবে কাঁচা বেল খেতে হয়। পাকা বেল খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি কাঁচা বেল খেলে সমান পরিমাণ উপকার পাওয়া যায়। কেউ কেউ আবার পাকা বেল খেতে পারেন না। তারা চাইলে কাঁচা বেল খেতে পারেন, কাঁচা বেলেও প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। তবে সঠিক নিয়ম মেনে বেল খেলে আপনি সম্পূর্ণ পুষ্টি গুনাগুন পাবেন এবং শরীরে উপকার হবে।তাহলে চলুন জেনে নিন কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
- আপনি চাইলে পাকা বেলের মতো কাঁচা বেলের শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এর জন্য আপনাকে কাঁচা বেলটিকে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। তারপরে একটি পাত্রে বেলের শ্বাস গুলোকে নিয়ে গরম পানি সঙ্গে স্বাদমতো চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।
- তাছাড়াও কাঁচা বেলের আচার বা চাটনি বানিয়ে খেতে পারেন। প্রথমে কাঁচা বেলকে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিন। এরপরে বেলের শ্বাসগুলোকে বের করে পরিমাণ মতো লবণ চিনি এবং ঝাল দিয়ে ঝাল ঝাল বানিয়ে খেতে পারেন খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।
আশা করছি কাঁচা বেল কিভাবে খেতে হয় আপনারা বুঝতে পেরেছেন। এইভাবে আপনি খুব সহজে কাঁচা বেল খেতে পারেন, এবং বেল এর সম্পূর্ণ পুষ্টি গুনাগুন পেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বেল খেলে আপনি একাধিক উপকারিতা পাবেন। অনেক চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার স্বাস্থ্যসম্মত। নবজাতক শিশুর অনেক উপকার হয়। তাহলে চলুন আরো কি কি উপকার হয়,গর্ভাবস্থায় বেল খেলে চলুন জেনে নিন।
- গর্ভাবস্থায় অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এইজন্য আপনি গর্ভাবস্থায় বেল খেতে পারেন কারণ বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা আপনার রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। এজন্য আপনি নিয়মিত বেল খেতে পারেন। তাহলে এই রক্তচাপের সমস্যা দূর হবে। কেননা বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম যা আপনার চাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি দরকার। এজন্য আপনি ভিটামিন সি এর উৎস হিসাবে বেল কে বেছে নিতে পারেন। ভিটামিন সি শরীরের জন্য কতটা উপকারী কমবেশি আপনারা সবাই জানেন। ভিটামিন সি এর কারনে নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরা কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো জটিল সমস্যায় ভুগে থাকেন। এইজন্য আপনি বেল খেতে পারেন। কারণ বেলে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ যা আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের সুস্থ থাকা খুব জরুরী এইজন্য সব ধরনের পুষ্টি শরীরের জন্য দরকার বিশেষ করে পটাশিয়াম যার শরীরের মাংসপেশী স্নায়ু সিস্টেমের কার্যকারিতা বজায় রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।পটাশিয়ামের প্রধান উৎস হলো বেল। এইজন্য গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পটাশিয়াম খুব প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়া শরীরের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু প্রয়োজনের অধিক পরিমাণ খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য প্রয়োজনে নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণ মতো খাবেন তাহলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকার পাবেন, আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
বেল খাওয়ার সঠিক সময়
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আবার অনেকে জানেন না বেল খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি? ইতি মধ্যেই আপনারা জেনে গিয়েছেন যে বেল খাওয়ার কত উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু বেলের এই উপকারিতা পেতে আপনাকে নির্দিষ্ট একটি সময়ে খেতে হবে তাহলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকার পাবেন। অন্যথা করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে। এবার চলুন জেনে নিন বেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে-----
- সকালে খালি পেটেঃ বেল খাওয়ার সবথেকে উপযুক্ত সময় হলো সকালে খালি পেটে আপনি যদি বিলেশ সরবত খেতে পারেন তাহলে আপনি খুব উপকার পাবেন। কারণ সকালে খালি পেটে বেল খেলে এটি সারাদিনের জন্য আপনার শরীরে পুষ্টি উপাদান ও শক্তি সরবরাহ করতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- দুপুরে খাবারের পরেঃ আপনার যদি হজম শক্তি কম হয়। বা হজমের সমস্যা থেকে থাকে। তাহলে আপনি দুপুরে খাবার খাওয়ার পরে বেল খেতে পারে। এতে করে আপনার পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করবে। এবং হজমের সমস্যা দূর হবে।
- গ্রীষ্মকালের দুপুরেঃ আপনারা তো সবাই জানেন গ্রীষ্মকালীন দুপুরে প্রচন্ড রোদে বাহির থেকে এসে আপনি বেলে শরবত খেতে পারেন। এতে আপনার শরীর শীতল থাকবে, এবং রোদের তাপ থেকে স্বস্তি মিলবে।
- দুপুরের সময়ঃ আপনারা চাইলে দুপুরের খাবারের পরে একটি পুষ্টিকর ডেজার্ট হিসাবে বেল খেতে পারেন।
বেল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করবেন
- অত্যন্ত ভারী বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পরে আপনি বেল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এতে আপনার হজমে সমস্যা হতে পারে।
- অনেকের আবার খালি পেটে বেল খেলে সহনীয় নাও হতে পারে। এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তারা খালি পেটে না খেয়ে বেল খাওয়ার আগে কোন কিছু খেয়ে তবে বেল খাবেন।
বেল এর পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে
খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ইতিমধ্যে জেনেছেন। এবার হয়তো আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন এসেছে যে ৫০০ গ্রাম বেলে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে জানতে চান? বেলে রয়েছে হাজারো পুষ্টি গুণের উপাদান। তাহলে চলুন ৫০০ গ্রাম বেলে কি পরিমাণ পুষ্টির উপাদান থাকতে পারে তার নিচের চোখের মাধ্যমে জেনে নিন।
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
সোডিয়াম | ৫ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.২৫ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৯৮ IU |
ভিটামিন এ | ৫৯ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৫.২৫ গ্রাম |
শর্করা | ২৫.৯ গ্রাম |
ফাইবার | ৪.২৭ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রট | ১১.৪ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৮ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.২০ গ্রাম |
শক্তি | ৯৮ কিলা ক্যালরি |
পটাশিয়াম | ২৭ মিলিগ্রাম |
আমাশয়ে বেলের উপকারিতা
অনেকেই জানতে চান আমাশয়ে আবার বেলের উপকারিতা কি? অবাক হবেন যে আমাশয়ে কিন্তু বেল অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান হিসেবে বিবেচিত রয়েছে। কারণ এটি শরীরের পানের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। তাছাড়াও আপনারা জানেন বিলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ট্যানিক ও ফাইবার থাকে। যা ডায়রিয়া কিংবা আমাশয়ে নিরাময়ে কাজ করে।তাছাড়াও হজম করতে সড়ক হিসেবে কাজ করে।
অতিরিক্ত পানি শোষণ করে এবং আমাদের অন্ত্রের প্রদাহ অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয় বরং আমাশায় ও ডায়রিয়ার সমস্যাতে বেল নিশ্চিত ভাবে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরে পানি শূন্যতা প্রতিরোধ করতে পারে। খুব সহজেই আমাশা ও ডায়রিয়া নিরাময় করতে পারে বেল। আশা করছি আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
লেখকের মন্তব্য খালি পেটে বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে
বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আজকের এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। আগে ভাবতেন বেল শুধু একটি সুস্বাদু ফল এর মধ্যে যে এত পুষ্টিগুণা গুণ আছে এ সম্পর্কে অনেকেই জানতেন না, তবে আজকের আর্টিকেলটি পড়লে। আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন বেলের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে।গ্রীষ্মকালের এই প্রচন্ড গরমে আপনার শরীরকে শীতল করতে এক গ্লাস বেলে শরবত যথেষ্টই।
তাই এই গরমে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল যুক্ত কোমল পানি না খেয়ে এক গ্লাস বেলে শরবত খেতে পারেন। আপনি নিয়মিত বেলের শরবত খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হবে। তবে সম্পূর্ণ পুষ্টি গুনাগুন পেতে আপনাকে নিয়ম অনুযায়ী পরিমাপ মতো বেল খেতে হবে। তাহলে দেরি না করে আজ থেকে আপনার খাদ্য তালিকায় সুস্বাদু এই ফলটি রেখে দিন। এতে করে আপনি এবং আপনার পরিবার সুস্থ থাকবে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। আপনার মহামূল্যবান সময় নষ্ট করে, আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
জুথি আর্টস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url