তরমুজ কেন খাবেন-তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
তরমুজ এই গরমে কেন খাবে, এবং তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।তরমুজ আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমরা এই বিষয়ে অনেকেই জানিনা তরমুজ আমাদেরএনার্জি শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি করে। শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে খুব কার্যকরী তরমুজ।
কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মতো তরমুজ খাওয়া উচিত এতে আমাদের শরীরের উপকার হবে। তাহলে চলুন তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবং তরমুজ খেলে কি কি পুষ্টিগুণাগুণ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ তরমুজ কেন খাবেন-তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
তরমুজ কেন খাবেন এবং তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে জানতে আজকে আপনি এই আর্টিকেলে ক্লিক করেছেন। তাহলে আপনি জেনে নিন তরমুজ খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। প্রচন্ড এই গরমে তরমুজ আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল যার খেলে আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা দূর হয় ক্লান্তি ভাব দূর হয় শরীরে এনার্জি ফিরে আসে। তরমুজে আরো চমৎকার কিছু পুষ্টির উৎস রয়েছে। তরমুজ হলো ভিটামিন বি৬ এর চমৎকার উৎস।
যা আপনার মস্তিষ্ক সবর রাখতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আরো রয়েছে তরমুজে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উপাদান এই উপাদানটি তরমুজে থাকার ফলে নিয়মিত তরমুজ খেলে আপনি কম অসুস্থ হবেন। তাছাড়াও আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হয়ে থাকে। তরমুজে থাকা এই উপাদানের ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার নামক মরণব্যাধি রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারবে না। তাহলে চলুন আজকের আলোচনা শুরুতেই এক ফালা তরমুজের হাজার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে আসি।
- তরমুজ হৃদপিন্ডের জন্য খুব উপকারী
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে তরমুজের জুরি মেলা ভার।
- তোগো চুলের যত্নে তরমুজ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তরমুজ খুব উপকারী।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- চোখ ভালো রাখতে তরমুজ খুব উপকারী একটু উপাদান।
- ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
- মাংসপেশীর ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- ত্বক পরিষ্কার করে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া খুব উপকারী।
- দেহের স্নায়ুর পুষ্টি যোগায়।
- আর্থাইটিসের ঝুঁকি কমায়।
- তরমুজ থেকে উপকারী ফ্যাট পাওয়া যায়।
- নিয়মিত তরমুজ খেলে পেট ব্যথা অম্বল গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- হাড় মজবুত করে।
- প্রাকৃতিকভাবে এনার্জি বুস্টার করে।
- অ্যাজমার ঝুকি কমায়।
- উচ্চ রক্তচাপ জনিত মাথা ব্যাথা দূর করে।
- তরমুজ খাওয়ার ফলে রাতে ঘুম ভালো হয়।
- শরীরে ক্লান্তি ভাব দূর হয়।
- দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে
- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- রক্তে শর্করা মাত্রা ঠিক রাখে।
- কিডনির জন্য খুব উপকারী
- অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- শরীর হাইড্রটেড রাখে।
তরমুজের অপকারিতা
তরমুজ কেন খাবেন এবং তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি এই সম্পর্কে আপনারা এখনই কিছু জেনেছেন। তবে চলুন আমরা অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি। দেখতে সুন্দর চমৎকার এবং খেতে তেমনি সুস্বাদু একটি ফল হলো তরমুজ। কিন্তু এই সুস্বাদু ফল আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমানে খেয়ে ফেলি তাহলে আমাদের শরীরের উপর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেকে আবার গরমের তৃষ্ণা মেটাতে অতিরিক্ত পরিমাণ তরমুজ খেয়ে থাকেন।কিন্তু অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া আদৌ কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাকি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রয়োজনের অধিক পরিমাণ তরমুজ খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা হয়।
- অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে যেমন ধরুন পেট ফাঁপা পেটে ব্যথা অথবা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় কারণ তরমুজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী একটি ফল। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এতে থাকা চিনির পরিমাণ বেড়ে যায় যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের আরে সমস্যায় পড়তে হয়।
- কিডনির উপর প্রভাব ফেলে তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি যা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
- লিভারের প্রদাহ বাড়ায়।
- হঠাৎ করে রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
- ইউরিনের চাপ বাড়ে।
- খুব দ্রুত ওজন বাড়তে পারে।
- এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়।
- দাঁতের ক্ষয় হয়।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘটতে পারে।
- শরীরে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
- ওভার হাইড্রেশন হয়।
- শরীরে ঠান্ডা লাগা।
- অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার পরে প্রচন্ড ঘাম হতে পারে।
- তাছাড়াও অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে গলা ব্যথা হতে পারে।
খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়
অনেকে আছেন যারা খালি পেটে তরমুজ খেতে অনেক পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়। একটি আদৌ কি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর। খালি পেটে তরমুজ খেলে এতে আপনার শরীরের ওপর কিছুটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ তরমুজে প্রায় ৯২% পানি রয়েছে আরো রয়েছে ফাইবার সুগারে ভরপুর। যার ফলে আপনি খালি পেটে তরমুজ খেলে আপনার রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। এতে আপনার পেট ফাঁপা অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে যাদের পাচনতন্ত্র দুর্বল এদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশি হয়। অনেকেই বিষয়টি জানেন নাকি জানিনা তবে তরমুজ কিন্তু ঠান্ডা প্রকৃতির ফল হওয়ার কারণে আপনি যদি সকালে খালি পেটে তরমুজ খান তাহলে আপনার সত্যি ও কাশি হতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন সব সময় ভরা পেটে তরমুজ খাওয়ার অথবা খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পরে তরমুজ খেতে পারেন এতে আপনি তরমুজ খাওয়ার সম্পূর্ণ পুষ্টি গুনাগুন পাবেন। শরীরে কোন ধরনের ক্ষতি হবে না।
তরমুজ খাওয়ার সঠিক নিয়ম
তরমুজ কেন খাবেন?তরমুজ খাওয়ার নিয়ম কি?তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। এবার আমরা তরমুজ খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম সম্পর্কে জানব। আমরা অনেক সময় এই উপকারী ফলটি নিয়ম না জানার কারণে ও সময় খেয়ে ফেলি যার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা হয়। এজন্য আপনাদের সুবিধার্থে তরমুজ খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানাটা খুব জরুরী। তাহলে চলুন আমরা আজকে তরমুজ খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নি।
- সকালে খাবার পরেঃ তরমুজ খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো সকালে নাস্তা খাওয়ার পরে কিংবা দুপুরে খাবার খাওয়ার আগে এই সময়ে তরমুজ খাওয়ার সঠিক সময়।কারণ এই সময় তরমুজ খেলে আমাদের হজম শক্তি তুলনামূলকভাবে আরও স্ট্রং হয়। যার ফলে তরমুজ খুব সহজে হজম হয় এবং শরীর হাইড্রেটেড রাখে।
- দুপুরে খাবার খাওয়ার পরেঃ দুপুরে খাবার খাওয়ার পরে আপনি চাইলে এক ঘন্টা বিশ্রাম নিতে পারেন। কারণ দুপুরে অনেক গরম থাকে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে তখন আপনার শরীরের জন্য তরমুজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ওয়ার্ক আউটের পরেঃ আমরা অনেক সময় শারীরিক ব্যায়াম বা পরিশ্রম করার সময় আমাদের শরীর থেকে অনেক ঘাম বের হয়। এটি আসলে আমাদের শরীরে ফি রেডিকেল বের করে। তখন আমাদের শরীরে অতিরিক্ত এনার্জি এবং রিফ্রেস করতে তরমুজ খুব কার্যকরী।
- আপনারা চেষ্টা করবেন খালি পেটে তরমুজ না খাওয়া এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। খালি পেটে তরমুজ খাওয়ার ফলে পেট ব্যাথা গ্যাস অথবা ডায়রিয়া হতে পারে এইজন্য তরমুজ খাওয়ার আগে হালকা কিছু খেয়ে নিবেন।
- ভাতের সাথে তরমুজ না খাওয়াঃ অনেকে ভাবেন ভাতের সাথে সালাদ হিসাবে তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু না, ভাতের সাথে তরমুজ খেলে হজম ক্রিয়ার গোলযোগ সৃষ্টি হয়। এজন্য ভাতের সাথে তরমুজ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- রাতে খাবারের পরেঃ রাতে খাবার খাওয়ার পরে তরমুজ খাওয়া ভালো কারণ তরমুজ খাওয়ার ফলে ঘুম ভালো হয়। কিন্তু এ সময় সামান্য পরিমাণে খাবেন। অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে আপনার হজমের সমস্যা হতে পারে।
- তরমুজের সাথে পানি খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ যেকোনো ধরনের ফল খাওয়ার পরে পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে হজমে সমস্যা হতে পারে। তরমুজ খাওয়া আধা ঘন্টা পরে আপনি পানি খেতে পারেন।
- ফ্রিজ থেকে বের করে ঠান্ডা তরমুজ না খাওয়াঃ আমরা অনেকেই প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা তরমুজ খেতে পছন্দ করি। কিন্তু ঠান্ডা তরমুজ খাওয়ার ফলে গলা ব্যথা,সর্দি ও কাশি হতে পারে কারন তরমুজ ঠান্ডা প্রকৃতির ফল। এজন্য আপনি চেষ্টা করবেন তরমুজ ফ্রিজ থেকে বের করে কিছুক্ষণ বাইরে রাখার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসার পরে খাবেন।
তরমুজ খাওয়ার পর যে খাবার খাওয়া উচিত নয়
- লবণঃ তরমুজ খাওয়ার পর অথবা তরমুজের সাথে লবণ মিশিয়ে কখনোই খাবেন না। কারণ তরমুজের সাথে লবণ মিশিয়ে খেলে তরমুজের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। যার ফলে আপনার শরীরে সঠিকভাবে তরমুজের পুষ্টিগুণ শোষিত হতে পারেনা। ফলে রক্তচাপ বেড়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
- দুধঃ তরমুজ ও দুধ একসাথে খাওয়া উচিত নয় কারণ তরমুজে ভিটামিন সি এর উপাদান রয়েছে। দুধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে। যার ফলে শরীর দ্রুত ফুলে যেতে পারে।
- ডিমঃ তরমুজ এবং ডিম ও একসাথে খাওয়া উচিত নয়। কারণেই দুটি আলাদা প্রকৃতির খাদ্য উপাদান। এই দুটি উপাদান একসাথে খাওয়ার ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। কারণ এই দুটি খাবার একটি আরেকটি কে হজম হতে বাধা দেয়।
- উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবারঃ তরমুজ খাওয়ার পরে অবশ্যই উচ্চ প্রোটিন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। না হলে তরমুজে যে পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে তা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন।
তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে
তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে? ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা অনেকেই এ প্রশ্ন করে থাকেন। এটি সম্পূর্ণ আপনার খাওয়ার পরিমাণের উপরে নির্ভর করবে। কারণ আমরা সবাই জানি তরমুজ একটি মিষ্টি জাতীয় ফল হওয়ায় এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাকৃতিক সুগার রয়েছে। আবার এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭২ যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অর্থাৎ এটি রক্তের শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। কারণ এতে ক্যালোরি ও কার্বোহাইডেট এর পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়।এইজন্য আপনি অল্প পরিমানে যেমন এক ফালা পরিমাণ তরমুজ খান তাহলে সেটি আপনার শরীরে ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের অংশ হিসাবে বিবেচিত হবে। যা আপনার ডায়াবেটিসের উপরে কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে না ক্ষতি করবে না। তবে অতিরিক্ত পরিমাণ তরমুজ খেলে রক্তে আব গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাঘাত করতে পারে।
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তরমুজ খাওয়ার আগে একজন ভালো চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তরমুজ খাওয়া। এবং আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কেমন রয়েছে সে অনুযায়ী একজন চিকিৎসক আপনাকে পরামর্শ দিবেন কতটুকু তরমুজ খেতে হবে তার জন্য।
তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে
তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে? সাধারণত এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনে ঘুরতে থাকে।দেখুন তরমুজ খেলে সাধারণভাবে ওজন বাড়ে না বরং ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে তরমুজ খুব কার্যকরী একটু উপাদান। তরমুজে প্রায় ১০০ ভাগের মধ্যে ৯২ ভাগ পানি রয়েছে। যার কারনে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এবং পেট ভরিয়ে রাখে যার ফলে ক্ষুধা কম লাগে, আবার এতে কেলোরির পরিমাণ খুবই কম।
১০০ গ্রাম তরমুজে মাত্র ৩০ গ্রাম ক্যালোরি থাকে। তাছাড়াও তরমুজে কোন ফ্যাট নেই বললেই চলে। সুগারের কথা বলতে গেলে এখানে প্রাকৃতিক সুগার রয়েছে যার কারণে আপনি নিয়মিত পরিমাণ মতো তরমুজ খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃত্তি পাবে না। অন্যদিকে তরমুজে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে খুব সহজেই হজম করতে সাহায্য করে যার ফলে অতিরিক্ত ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ডায়েটে তরমুজ রাখতে পারেন।
এতে আপনার অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে বা ওয়েট লস করতে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমান দীর্ঘদিন তরমুজ খেয়ে থাকেন। তাহলে আপনার শরীরে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট বেড়ে যেতে পারে এতে আপনার ওজন কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তাই বলবো তরমুজ খাওয়ার সময় পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন। পরিমাণ মতো তরমুজ খেলে ওজন বাড়ার পরিবর্তে উল্টো ওজন কমতে শুরু করবে।
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা কি কি? তরমুজের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা এতক্ষন জেনেছি। কিন্তু আপনি কি জানেন গর্ভকালীন সময়ে এই ফলটি গর্ভবতী মায়ের জন্য খুব উপকারী। বিশেষ করে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসকরা তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নিন।
- শরীরে পানি শূন্যতা দূর করেঃ আমরা সবাই জানি তরমুজে ৯২% পানি রয়েছে। যা গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য খুব উপকারী। এটি শরীর ডিহাইট্রেশন প্রতিরোধ করে শুধু পানি চাহিদা পূরণ করে। শরীরে সারাদিনে ক্লান্তি মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়।
- গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভবস্থায় অনেক মায়েরা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগে থাকেন। এইজন্য চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেতে বলেন। কারণ তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা মলত্যাগ করা সহজ করে তুলে।
- শরীরে পুষ্টি যোগায়ঃ পুষ্টিগুনে ঠাসা একটি উপকারী ফল হলো তরমুজ।এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন।ভিটামিন এ ভিটামিন বি ভিটামিন বি৬ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে ভিটামিন সি এর উপাদান। ভিটামিন এর কারণে চোখের জন্য খুব উপকারী। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তরমুজের পুষ্টি গুনাগুনের কারণে শিশুর মস্তিষ্ক স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে কাজ করতে সাহায্য করে।
- মনিং সিকনেস কমায়ঃ গর্ভকালীন সময়ে একটি সাধারণ সমস্যা হলো সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে শরীরে বমি বমি ভাব অনুভব করা মাথা ঘুরানো খাবারে অরুচি এ সমস্যা গুলো প্রতিরোধ করতে আপনি তরমুজ খেতে পারেন। কারণ তরমুজ খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। তাছাড়াও তরমুজে রয়েছে সুগার ও পানির সংমিশ্রণ যা সকালের মর্নিং ফিটনেস কমাতে সাহায্য করে।
- পা ফোলা কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় খুব সাধারন একটি সমস্যা হলো অনেকের শরীর ফুলে যায়। বিশেষ করে হাত ও পা এবং পায়ের গোড়ালি। কিন্তু এ সময় তরমুজ খেলে তরমুজে এন্টি ইনফ্লামেটারি গুণাবলী এবং উচ্চ জলীয় উপাদান রয়েছে যা শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে হাত ও পায়ের ফোলা ভাব কমাতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- এসিডিটি দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় আরো একটি প্রধান সমস্যা হলো এসিডিটি সমস্যা। এ সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে পারে একমাত্র তরমুজ। কারণ তরমুজে রয়েছে ক্ষারীয় উপাদান যা পেটের এসিড কমাতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। এই সমস্যা দূর করতে আপনি নিয়মিত তরমুজ খেতে পারেন। কারণ তরমুজে পটাশিয়ামের উপাদান রয়েছে। যার রক্তে চাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এবং গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
- শিশুর বিকাশ গঠনে সহায়তা করেঃ তরমুজে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ৬, পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার থাকার কারণে একটি গর্ভাবস্থায় শিশুর চোখে,হাড়, স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করে।
- গরম লাগা কমায়ঃ গর্ভকালীন সময়ে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা বেড়ে যায়। তাই শরীরে তাপমাত্রা ঠান্ডা রাখতে আপনি নিয়মিত তরমুজ খেতে পারেন। তরমুজ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে, ঠিক তেমনি হিট রেস বা চর্ম রোগের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- সম্মানিত পাঠক, গর্ভাবস্থায় তরমুজ নিঃসন্দেহে একটি উপকারী ফল। তবুও এটি পরিমান মতো খাওয়া উচিত। কারণ অতিরিক্ত খেলে আপনার শরীরের রক্তের শর্করাকে প্রবাহিত করতে পারে। আর একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন মায়েদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই তরমুজ খাওয়ার আগে এ বিষয়টি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুব জরুরী।
তরমুজে কি ভিটামিন আছে
তরমুজে কি ভিটামিন আছে? এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। তরমুজের এতসব স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পরে এবার আপনি নিশ্চয় তরমুজের ভিটামিন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা আপনার সুবিধার্থে নিচে একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরেছি।
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
শক্তি | ৪১ ক্যালোরি |
পানি | ৯৩ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.৭ গ্রাম |
খনিজ পদার্থ | ০.৩ গ্রাম |
ভিটামিন এ | ১৮৪ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৮.২ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১২২ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১২ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ০.৩ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.১৭ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৭.৩ গ্রাম |
সুগার | ৬.৩ গ্রাম |
ফাইবার | ৯৬ গ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১১ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৯ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.২৭ গ্রাম |
তরমুজে কি এলার্জি আছে
তরমুজে কি এলার্জি আছে? তরমুজ খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এতক্ষণ জেনেছেন। কিন্তু তরমুজে কি আদৌ এলার্জি থাকে। দেখুন কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তরমুজ এলার্জির কারণ হতে পারে। কারণ তরমুজে থাকা কিছু প্রাকৃতিক প্রোটিন এবং PR -10 যা শরীরে এলার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।বিশেষ করে যারা আগে থেকে এলার্জিতে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ওরাল এলার্জি সিনড্রোম।
আর এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঠোট ফোলা,মুখ গলা জিভে চুলকানি ইত্যাদি হতে পারে। অনেক সময় হাঁচি-কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বলবো তরমুজ খাওয়ার পরে যদি এমন সমস্যা দেখা দেয় আপুরে দেরি না করে একজন ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। আর আপনার যদি তরমুজে এলার্জি থাকে তাহলে তরমুজ খাওয়া থেকে আপনি বিরত থাকুন।
তরমুজে কি সুগার আছে
বর্তমান সময়ে সুগার কথা শুনলে মানুষ কেমন জানি এড়িয়ে চলে।এজন্য অনেকে জানতে চান তরমুজে কি আদৌ সুগার আছে? তাহলে জেনে রাখুন তরমুজের সুগার থাকে। তবে এটি প্রাকৃতিক সুগার যা ফ্রুক-টোজ নামে পরিচিত। তরমুজে প্রায় ৬-৭ শতাংশ চিনি থাকে। যার ফলে তরমুজ খেতে মিষ্টি স্বাদের হয়। তবে যেহেতু এই চিনি প্রক্রিয়াজাত নয়। এবং প্রাকৃতিকভাবে ফলের সাথে থাকে ফলে এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু নয়।
যদি আপনি নিয়মিত পরিমান মতো তরমুজ খান তাহলে আপনার শরীরে তেমন ক্ষতি হবে না। তরমুজে রয়েছে ৯২% পানি যার ফলে এটি দ্রুত রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় না তবে ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ভালো বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিত। কারণ তার সুগার লেভেল কেমন রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে তারপরে তরমুজ খাওয়া উচিত।
সম্মানিত পাঠ, আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন তরমুজের সুগার রয়েছে কিন্তু এটি পরিমাণ মতো খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষণ আমরা বিস্তারিতভাবে আর্টিকালে মাধ্যমে আলোচনা করেছি। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছেন। প্রচুর পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে তরমুজ অন্যতম। এমনকি তরমুজের বীজও খুব উপকারী। তরমুজের মতো তরমুজের বীজ সমানভাবে উপকারী। একটা সময় ছিল যখন কেবলমাত্র নেট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে তরমুজ পাওয়া যেতে। কিন্তু বর্তমানে কৃষি প্রযুক্তি উন্নতি হওয়ার কারণে এখন বাজারে প্রায় কমবেশি সারা বছর তরমুজ পাওয়া যায়।
তরমুজের পুষ্টি গুনাগুন এত বেশি যে সুপার ফুড হিসেবে ধরা হয়। তাছাড়া আমাদের শরীরের পানি ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। এইজন্য তরমুজের জুরি মেলা ভার। আপনি যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পরিচিতদের সাথে আজকের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জুথি আর্টস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url